কফি আনানের রিপোর্টেও ‘রোহিঙ্গা’ নেই, আছে ‘মুসলমান’

Slider সারাবিশ্ব
কফি আনানের রিপোর্টেও ‘রোহিঙ্গা’ নেই, আছে ‘মুসলমান’


মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সুপারিশ করতে কফি আনানের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা কমিশনও রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তারা রাখাইনের অধিবাসীদের ‘মুসলমান’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।

ফলে কফি আনানের যে রিপোর্টকে ভিত্তি করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে, সেই রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। মিয়ানমার সরকারও বলছে, এঁরা রোহিঙ্গা নয়-বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী।বিশ্লেষকরা বলছেন, কফি আনানের রিপোর্টেও রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি না থাকায় শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ব্যহত হতে পারে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের অস্থিরতা, সংকট সমাধানের জন্য একটি সুপারিশমালা প্রণয়নের করার জন্য ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অং সান সু চি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ফাউন্ডেশনকে প্রস্তাব দেয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘কফি আনান ফাউন্ডেশন’ সু চি’র প্রস্তাব গ্রহণ করে। পরে ফাউন্ডেশন এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের অফিসের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ‘এডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট’ গঠন করা হয়। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান এই কমিশনের প্রধান ব্যক্তি হলেও কমিশনের অধিকাংশ সদস্যই মিয়ানমারের প্রতিনিধি।

জানা যায়, কফি আনানের নেতৃত্বে কমিশন গঠন করে দিয়ে সু চি একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন, রিপোর্টে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। কফি আনান সেই কথা রেখেছেন। তিনি পুরো রিপোর্টে কোথাও রোহিঙ্গা বা বাঙালী শব্দটি ব্যবহার করেননি।  রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দাদের কফি আনানের রিপোর্টে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘মুসলমান’ হিসেবে। ফলে উপদেষ্টা কমিটির সামনে সমস্যাটি রোহিঙ্গা হিসেবে থাকেনি, হয়ে গেছে বৌদ্ধ সরকারের সাথে মুসলমানদের সমস্য।

কফি আনান তার রিপোর্টে এই তথ্য স্বীকারও  করেছেন। রিপোর্টেই বলা হয়েছে, ‘স্টেট কাউন্সিলের অনুরোধ হিসেবে এই রিপোর্টে বাঙালি এবং রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি, তার পরিবর্তে ‘মুসলমান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, রাখাইনের মুসলমান সম্প্রদায় ব্যবহার করা হয়েছে। ‘

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাখাইনের অধিবাসীরা নিজেদের রোহিঙ্গা হিসেবেই পরিচয় দেয়। আর মিয়ানমার তাদের কখনোই রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকার করেনি। মিয়ানমার সরকারের চোখে- এরা ‘বহিরাগত, অবৈধ অধিবাসী, মূলত বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ঢুকে পড়া। ‘ফলে মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব দেয়নি, ভোটাধিকার দেয়নি এমনকি চলাচলের স্বাধীনতাও দেয়নি।

বিশ্লেষকদের সূত্রে বলা হয়, রোহিঙ্গা শব্দটির মধ্যেই রাখাইনের স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা পরিষ্ফুটিত হয়ে যায় বলেই মিয়ানমার রোহিঙ্গা হিসেবে তাদের স্বীকার করে না। কফি আনানের রিপোর্টে রোহিঙ্গা শব্দটিকে ঢুকতে না দেওয়া মিয়ানমারের সেই অবস্থানেরই প্রতিফলন মাত্র।

সূত্র: নতুনদেশ ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *