বিদেশি মুদ্রা খরচ করে মাল্টা ও আপেল কিনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। মান খারাপ থাকায় বা দ্রুত খালাস না করায় সেই ফল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে থেকেও নষ্ট হয়ে গেছে। এ রকম নষ্ট হওয়া ৫ লাখ ১৫ হাজার কেজি মাল্টা ও আপেল এবার ধ্বংস করার আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। যার আমদানি মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। আর বাজার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। আগামীকাল সোমবার এসব ফল ধ্বংস করার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব ফল নষ্ট হওয়ায় আমদানিকারকের পাশাপাশি আমদানির সঙ্গে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই লোকসান গুনেছে। এই যেমন আমদানিকারক ফল খালাস না করায় বা নিলামে তুলে বিক্রি করতে না পারায় রাজস্ব জমা পড়েনি কাস্টমসের তহবিলে। ফলভর্তি কনটেইনার বন্দর চত্বরে রাখার ভাড়াও পায়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। শিপিং এজেন্টও কনটেইনারের ক্ষতিপূরণ মাশুল পায়নি। সব পক্ষের লোকসানের ভিড়ে শুধু লাভের মুখ দেখেছে বিদেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ, ফল রপ্তানি করে তারা ডলার আদায় করে নিয়েছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবার ধ্বংসের তালিকায় রেখেছে ২১টি কনটেইনার (প্রতিটি ৪০ ফুট লম্বা) পণ্য। এর মধ্যে মাল্টার পরিমাণ ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫২০ কেজি। আপেলের পরিমাণ ৪৭ হাজার ৮৮৭ কেজি। এ ছাড়া রয়েছে ১২ হাজার ৬৫০ কেজি পেঁয়াজ।
কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আহসান উল্লাহ বলেন, আমদানিকারকেরা খালাস না নেওয়ায় এসব ফল নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। এ জন্য ফলের নমুনা পরীক্ষা করে মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয় বলে প্রতিবেদন দেয় উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র ও পরমাণু শক্তি কমিশন। তাই এসব ফল ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার বন্দর থেকে খালাস করে নগরের হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় গর্ত খুঁড়ে এসব ফল মাটিচাপা দেওয়া হবে।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসের তালিকায় রয়েছে নগরের স্টেশন রোডের চট্টগ্রাম ফল বাণিজ্য লিমিটেডের আমদানি করা এক কনটেইনার মাল্টা। মিসর থেকে এই ফল চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয় গত ৬ মার্চ। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা জানান, খালাস-প্রক্রিয়ার সময় তাঁরা জানতে পারেন, আমদানি করা এই ফলের ২৫ শতাংশের মান খারাপ ছিল। এ জন্য রপ্তানিকারকের কাছে চিঠি দিয়ে মূল্য ছাড়ের আবেদন জানানো হয়। রপ্তানিকারক আমদানি মূল্যের ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার পর দেখা যায়, কনটেইনারের ৭৫ শতাংশ ফলই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে আর খালাস নেয়নি তারা।
আমদানিকারক ফল বাণিজ্য লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ফলবাহী কনটেইনার বন্দরে আনার পর ব্যাংকের মাধ্যমে গুনে গুনে ৯ হাজার ৬০০ ডলার পরিশোধ করেছি। এখন শিপিং এজেন্ট কনটেইনারের ক্ষতিপূরণ মাশুল চাইছে। রপ্তানিকারকও উল্টো এই মাশুল দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। অথচ আমাদের কোনো দোষ ছিল না।’
এই প্রতিষ্ঠানের মতো চট্টগ্রাম ফলমন্ডি এলাকার এফ কে ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের পাঁচ কনটেইনার ফল ধ্বংস করা হবে। মিসর থেকে ৯ মার্চ এই পাঁচ কনটেইনার ফল বন্দরে আনা হয়। এই পাঁচ কনটেইনারে রয়েছে মোট ১ লাখ ২৮ হাজার কেজি মাল্টা। এ দুটো প্রতিষ্ঠান ছাড়াও মরিয়ম এন্টারপ্রাইজ, রামিসা এন্টারপ্রাইজ, এফ ট্রেড করপোরেশন, সোহরাব এন্টারপ্রাইজসহ নয়টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের আমদানি ফল ধ্বংস করা হবে। ন্যূনতম ৪ থেকে ১০ মাস আগে এসব ফল আমদানি করা হয়েছিল।
যে ২১ কনটেইনার ফল ধ্বংস করা হচ্ছে, সেসব কনটেইনার ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিএমএসিজিএমের মালিকানাধীন।