গ্রাম বাংলা ডেস্ক
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যে অপরাধী সে অপরাধীই। দলের লেবাস পরলেই পার পাবে তা কিন্তু হবে না। আমার সিদ্ধান্ত পরিস্কার। অপরাধ যেই করুক, অন্যায় যে করুক, কে কোন্ দল করে তা আমি দেখবো না।
জাপান সফররত প্রধানমন্ত্রী সে দেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এক ধরনের লোক আছে যারা সব সময় সরকারি দল করে। তারা সরকার আসলে ভোল পাল্টে সরকারি দল
হয়ে যায়। এখন যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা জামায়াত-শিবিরের লেবাস ও ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগ, যুবলীগে আশ্রয় নিয়েছে। এরা যুবলীগের ভেতরে এসে যত অপকর্ম, খুন, খারাবী, সন্ত্রাসী করে যাচ্ছে।’
হোটেল অকুরাতে অনুষ্ঠিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাপান আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদুর রহমান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম আরিফ শামসুল আলম ভূট্টো এবং মাহমুদ রবি চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্রবাসী বাঙ্গালীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন। আমরা অপরাধীকে কখনো প্রশ্রয় দিই নাই। কখনো দেবো না। আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করবো।’
জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জাপান সরকার এবং সে দেশের জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ায় তাদের অবদান অপরিসীম। দুঃসময়ে তাদের পাশে পেয়েছি।
জাপান সরকারের ৬০০ বিলিয়ন ইয়েন দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই অর্থ দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো এবং খুঁজে দেখবো নতুন কি প্রকল্প গ্রহণ করা যায়।
এছাড়াও জাপান ১২০ বিলিয়ন ডলার ওডিএ সহায়তা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে এবং জাপানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস রফতানি ২০০ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে জিএসপি সুবিধা দেওয়ার কারণে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন বাংলাদেশ আরো আগে উন্নত দেশে পরিণত হতো। কিন্তু মিলিটারি ডিকটেশন দেওয়ার কারণে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের ওপর বার বার আঘাত এসেছে, তাদের কারণে বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত উন্নতি করতে পারেনি।বিভিন্ন সময় কিছু গাদ্দার সৃষ্টি হয়েছিল, তারা এ দেশের সর্বনাশটা করেছে।
জিয়াউর রহমানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। আমার একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল ক্ষমতায় এসে খুনিদের বিচার করা। দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। যে কোন দেশের উন্নতির জন্য অবিচ্ছিন্ন গণতন্ত্র একান্তভাবে প্রয়োজন। গণতন্ত্র ছাড়া কোন দেশ উন্নতি করতে পারে না।
ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ ও পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ যাতে প্রাচ্য প্রাচ্যাত্যের সেতু হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা প্রতিবেশী দেশের সাথে সৎভাব ও বন্দুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে সেটাই চাই।
শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে চাই। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে চাই না।
৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে দেশকে। বিএনপি-জামায়াত-শিবির মিলে নানা ধরনের অপকর্ম করে এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রশয় দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালে কেয়ারটেকার সরকার এসে নিজেদের টেককেয়ার করেছে। তাদের খায়েশ ছিল কিভাবে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করবে। তারা আমাকে দেশে আসতে বাধা দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপে অবশেষে দেশে আসতে দেয়।
বিএনপির সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা বহু মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, অবলা গরু পর্যন্ত রেহাই পায়নি, তারা ১৭ জন পুলিশকে হত্যা করেছে। এসময় অনেক শক্তি তাদের আন্দোলনে বাতাস দিয়েছে। বিএনপি নেত্রী জনগণের দিকে তাকাননি ‘বড় বাড়ির’ দিকে তাকালেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দড়ি ছিঁড়ে পড়লে তারা ক্ষমতায় যাবেন সেই আশায়।
প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের প্রতি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোন কাজ না করা এবং সুনাম বৃদ্ধির জন্য অবদান রাখার আহ্বান জানান।ঢাকা-নারিতা সরাসরি বিমান চালুর দাবির ব্যাপারে ঢাকা গিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।