ইলিশের ধুম!

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

9933c72a68cd7e78b146ed29bdcd1905-59c505995ba24

 

 

 

 

‘এক সাইজ এক সাইজ’, ‘বড় ইলিশ এখানে’, ‘সস্তা খাইলে এখানে’, ‘ফ্রেশ মাছ’—এ রকম নানা হাঁকডাকে সরগরম চারপাশ। এই হাঁকডাকের লক্ষ্যই হলো ক্রেতার নজর কাড়া। কেউ ছোট টুকরিতে বড় ইলিশ নিয়ে, আবার কেউ বড় টুকরিতে করে হাতে হাতে নিয়ে হাঁকডাক দিচ্ছেন। ক্রেতারাও নিজের মতো করে চালাচ্ছেন দর-কষাকষি। তবে কাউকেই মাছ না কিনে খালি হাতে যেতে দেখা যায়নি।

এ চিত্র চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফেরিঘাটের। দুপুরের তপ্ত রোদও দমাতে পারেনি ভোজনরসিক ইলিশ ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। শুধু কুমিরা ফেরিঘাট নয়, ইলিশ কেনা বেচার ধুম লেগেছে চট্টগ্রামের প্রতিটি ঘাট, রাস্তার ধার, মাছের পাইকারি আড়ত, হাট-বাজারে, এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়েও জেলেরা ইলিশ বিক্রি করছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিরা ঘাটে কথা হয় চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর থেকে আসা কলেজশিক্ষক রাকিবুল হাসানের সঙ্গে। প্রতিবছর কুমিরাতে তিনি ইলিশ কিনতে আসেন। তিনি চার হাজার টাকা দিয়ে অন্তত ২২ কেজি মাছ কিনেছেন। বেশির ভাগ ইলিশের প্রতিটির ওজন ৫০০ গ্রামের ওপরে।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসে একটি অমাবস্যা ও একটি পূর্ণিমার আগে-পরে পাঁচ দিন করে ১০ দিন ইলিশ বেশি ধরা পড়ে। ৩০০ গ্রামের ছোট ইলিশ প্রতি মণ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা, ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ৮০০ গ্রামের ওপরে ইলিশ ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জেলেরা জানান, ইলিশের এখন ডিম ছাড়ার সময়। তাই মিঠা পানিতে ডিম ছাড়ার জন্য উপকূলের কাছাকাছি ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে ইলিশ।

fbe11e31195bdb363f533a615de3b2b4-59c505997ff69

 

 

 

 

কুমিরা ফেরিঘাটে দেখা যায়, সাগর থেকে খাল দিয়ে একের পর এক ইলিশবোঝাই নৌকা এসে ভিড়ছে ঘাটে। সঙ্গে সঙ্গে সেসব নৌকা ঘিরে ধরছেন পাইকারি ক্রেতারা। বেশির ভাগ মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য বরফ ও লবণ দিচ্ছেন। তবে কিছু মাছ উপস্থিত ক্রেতাদের কাছে লাভে বিক্রি করে দিচ্ছেন। সীতাকুণ্ড, বাড়বকুণ্ডের আড়ত, শুকলাল হাট, বাঁশবাড়িয়া, ছোটকুমিরা, কুমিরা, জোড় আমতল, বারো আউলিয়া দরগাহ, মদনাহাট, কদমরসুল, মাদামবিবির হাট, ভাটিয়ারি, জলিল গেটসহ ছোট-বড় বাজারে সকালে ও বিকেলে ইলিশের জন্য ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।

বাড়বকুণ্ড এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, আজ শুক্রবার সকালে বাড়বকুণ্ড বাজার থেকে প্রতিটি ৩৫০ গ্রাম ওজনের বেশি মাছ কেজিপ্রতি ১৭৫ টাকা দরে পাঁচ কেজি মাছ কিনেছেন। এদিনই এ বছরের সবচেয়ে কম দাম দিয়ে ইলিশ কিনেছেন তিনি।

কুমিরা এলাকার জেলে কমল কৃষ্ণ জলদাস বলেন, তাঁর একটি ছোট নৌকায় ছয় মণ ইলিশ ধরা পড়েছে। মাছ বিক্রি করতে পেরে তিনি খুব খুশি। ৫০ হাজার টাকা দাদন ছিল। সব শোধ করে ফেলেছেন তিনি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, সীতাকুণ্ডে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেরা মাছ ধরতে এত ব্যস্ত যে চলতি মাসের ইলিশের হিসাব নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পুরো সীতাকুণ্ডে সাত দিনে ১০০ টন বরফ উৎপাদন হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর ইলিশ ধরা পড়েছে ১ হাজার ২৫৩ মেট্রিক টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। তবে চলতি আগস্ট মাসেই ধরা পড়েছে ৬০০ মেট্রিক টনের কিছু বেশি। আগামী ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে, যাতে ইলিশ ডিম ছাড়তে পারে। মা-মাছ নিধন বন্ধে সরকার-নির্ধারিত ২২ দিন সাগর, নদী, উপকূলের কোথাও জাল ফেলতে পারবেন না জেলেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *