মোঃ জাকারিয়া, গাজীপুর: নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই গাজীপুর সিটিকরপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুর বিএনপির আভ্যন্তরীন কোন্দল ক্রমেই ষ্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এ কে এম ফজলুল হক মিলনের মধ্যে গোপনীয় বিরোধ আস্তে আস্তে ষ্পষ্ট হচ্ছে। জাতীয়তাবাদী বনাম আওয়ামী জাতীয়তাবাদী দুটি গ্রুপের মধ্যে একটি গ্রুপ প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করতে পারছে। আর অন্য গ্রুপ রাজনীতির মাঠে বের হতে পারছে না।
এমতাবস্থায় কাল বৃহসপতিবার দুপুরে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন মহানগরের মীরের বাজার এলাকায় একটি অজ্ঞাত স্থানে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছেন। এই সভায় জাতীয়বাদী সাইনবোর্ডে থাকা কতিপয় বিএনপি ও সাংবাদিক নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে যে সকল বিএনপি নেতা গাজীপুর জেলায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে প্রকাশ্যে রাজনীতি করে যাচ্ছেন। তথ্য রয়েছে, বিএনপি সরকারের আমলে অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থ কাজে লাগাতে ও নিরাপদে থাকতেই তারা আওয়ামী-জাতীয়তাবাদী গ্রুপ তৈরী করে রাজনীতি করছেন।
রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি কতিপয় রাজনৈতিক সাংবাদিক তাদের অবৈধ অর্থ নিরাপদ করতে আওয়ামী-জাতীয়তাবাদী সাইনবোর্ড ব্যবহার করছেন। বিএনপির সময় বিএনপি ও আওয়ামীলীগের সময় আওয়ামীলীগের ব্যানারে থাকা ওই সকল সুবিধাবাদী সাংবাদিক ক্ষনে ক্ষনে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন। ফলে গাজীপুর বিএনপিতে স্পষ্টতই দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা আস্তে আস্তে সামনে আসছে।
দলীয় সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান কারাগারে থাকা অবস্থায় তার দল বিএনপির একটি বড় অংশ নীরব ভূমিকা পালন করে।
তথ্য রয়েছে, মেয়র গ্রেফতারের পর বিএনপির কতিপয় নেতার অর্থায়নে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়েছে। আবার মেয়রকে আদালতে আনা-নেয়ার সময় বা কারাগারে থাকা অবস্থায় মিষ্টি বিতরণকারী নেতারাও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
এছাড়া মেয়র মান্নান গ্রেফতারের পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের সঙ্গে মিলনপন্থী কতপিয় কাউন্সিলর মিলে যায়। ফলে মিলন পন্থী কাউন্সিলরগণ প্রকাশ্যে দায়িত্ব পালন করে কিরণের সঙ্গে কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমনেও অংশ নেয়। আর মান্নানপন্থী কাউন্সিলরগন পালিয়ে পালিয়ে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এম মান্নান কারাভোগ করে পুনরায় মেয়রের চেয়ারে বসার পর মিলনপন্থী কাউন্সিলরগণ আবার মান্নানের সঙ্গে মিলে যাওয়ার চেষ্টা করে অনেকে সফলও হয়। বর্তমানে মিলনপন্থী সকল কাউন্সিলরগনের অসহযোগিতার কারণে মেয়র মান্নান স্বভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। বিভিন্ন অজুহাতে মেয়র অনেকটা অনুপস্থিত থেকেই এখন গাজীপুর সিটির দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে অধ্যাপক এম এ মান্নান মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে মান্নান পন্থী বিএনপি নেতারা বেশী সুবিধাভোগ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মেয়র মান্নান গ্রেফতারের আগে চেয়ারে থাকার সময় যারা সুবিধা পাননি তাদের মধ্যে অধিকাংশ নেতাই জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সমর্থক বলে পরিচিত। এতে অধ্যাপক মান্নান গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের মেয়র হওয়াকে কেন্দ্র করে গাজীপুর বিএনপি দু্ই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায়, মেয়র মান্নানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ ও মিলনের নেতৃত্বে অপর একটি গ্রুপ গাজীপুর বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছে। যার প্রভাব আগামী সিটি নির্বাচনে ব্যাপক ভাবে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একাধিক রাজনৈতিক সূত্র বলছে, আগামী মেয়র নির্বাচনে অধ্যাপক মান্নান যাতে পুন:রায় মেয়র হতে না পারেন তার জন্য বিএনপিতে একটি গ্রুপ সৃষ্টির কাজ চলছে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপিতে মান্নান বিরোধী গ্রুপ দিন দিন সক্রিয় হচ্ছে।
দলীয় কর্মীরা বলছেন, মান্নান বিরোধী বিএনপি, আওয়ামীলীগের একজন প্রভাবশালী সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে আঁতাত করে সাংগঠনিক কাজ করছেন।
বিএনপির সাধারণ কর্মীরা বলছেন, মান্নান ্ গ্রুপ ও মিলন গ্রুপ অনেকটাই ষ্পষ্ট। বিএনপিতে দুটি গ্রুপ থাকার কারণে আগামী সিটি নির্বাচন এমনকি জাতীয় নির্বাচনেও ভাল প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে।
তাদের দাবি, অনতি বিলম্বে দলীয় কোন্দল নিরসন করতে না পারলে গাজীপুর বিএনপির ভবিষৎ অমঙ্গল হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।