মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। অন্যদিকে বর্তমানে দেশটির ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি।
কিন্তু সেনাবাহিনীর অভিযানের পক্ষেই সাফাই গাইছেন তিনি।এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চিকে দেওয়া সম্মাননা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সংস্থাও সুচি’র সম্মানসূচক ডিগ্রি ও পদ ফিরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
দেশটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম অত্যাচারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার পরও তাদের রক্ষায় সু চি উদ্যোগ না নেওয়ায় ইউনিসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের প্রচারাভিযানের সময় অং সান সু চি কারাবন্দি থাকাকালে ২০১০ সালে তাঁকে এ সম্মাননা দিয়েছিল ইউনিসন। ইউনিসন বলছে, তারা সু চিকে দেওয়া সম্মাননাসূচক সদস্যপদ স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবের জন্য ব্যবস্থা নিতে সু চির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
ইউনিসনের সভাপতি মার্গারেট ম্যাককি ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবস্থা খুবই হতাশাজনক। এ অবস্থায় অং সান সু চির ইউনিসনের সম্মানিত সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক চাপের প্রতি তিনি সাড়া দেবেন। ‘
দেশটির ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটিও সু চিকে দেওয়া সম্মাননা স্থগিত করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। তাঁকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির একজন মুখপাত্র বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের মাধ্যমে ‘জাতিগত শুদ্ধি’র অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ। এ অবস্থায় মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
মুখপাত্র আরও বলেন, ১৯৯৮ সালে আমরা অং সান সু চিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছিলাম। তখন তিনি মিয়ানমারে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিগ্রির বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করব।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের স্টুডেন্টস ইউনিয়নও জানিয়েছে যে তারা সু চির সম্মানিত প্রেসিডেন্ট পদ প্রত্যাহার করে নেবে। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতির পাশা বলেন, রোহিঙ্গা নির্যাতনে অং সান সু চির বর্তমান অবস্থান ও গণহত্যার পরও নিষ্ক্রিয় থাকায় আমরা তাঁর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট পদ ফিরিয়ে নেব।
৩০ বছর ধরে অং সান সু চি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো, বাথ, কেমব্রিজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শহর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও তাঁকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।