মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যে রাখাইনে নতুন করে সহিংসতা শুরর পর থেকে ফের একটি নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। তিনি হলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু অশিন উইরাথু।
২০১৩ সালের জুন মাসে প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিন তার উপাধি দিয়েছিল ‘ফেইস অব টেরর'(সন্ত্রাসীর চেহারা)। গত ২৫ আগস্ট তল্লাশিচৌকিতে হামলার জেরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নতুন করে জালাও-পোড়াও নীতি গ্রহণ করে রাখাইনে।প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছে চার লাখ ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। গত মাসে নতুন করে অভিযান শুরুর ছয়দিনের মাথায় অশিন উইরাথু ৩০ আগস্ট রাখাইনের মংদুতে মার্শাল ল’ জারির আহ্বান জানান। মিয়ানমারে ১৯৮২ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্বের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। ওই দিন আয়োজিত ‘কফি আনান রিপোর্ট ও সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে’ আয়োজিত এক বিক্ষোভে এই আইন সংশোধনের প্রয়োজন নেই বলেও দাবি করেন অশিন উইরাথু।
তবে এটাই প্রথম নয়। মিয়ানমারে মুসলিমদের প্রতি বৌদ্ধদের মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর। যাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণ্য ব্যক্তি বলে আখ্যায়িত করে থাকে। নিজের আদর্শের জন্য বেশ ঝামেলায়ও পড়তে হয়েছিল তাকে। শুরুর দিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সরকারও তার আদর্শের বিরোধিতা করেছে। এখন অবস্থা পাল্টে গেছে। দুই পক্ষকেই অশিন উইরাথু এবার নিজের কাতারে সামিল করতে সক্ষম হয়েছেন।
অশিন উইরাথুর জন্ম ১৯৬৮ সালে মান্ডালে শহরে। ১৪ বছর বয়সে তিনি পড়াশুনা ভিক্ষু বনে যান। ২০০১ সালে তিনি মুসলিম বিরোধী গ্রুপ ‘৯৬৯ মুভমেন্ট’ এ যোগ দিয়ে আলোচনায় আসেন। মিয়ানমারের মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন সাধারণ বৌদ্ধদের। এ জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ভুয়া খবর ছড়াতে শুরু করেন। মিয়ানমার সরকার ২০০৩ সালে অশিন উইরাথুকে ২৫ বছরের জেল দেয়। ২০১২ সালে তিনি অন্যান্য রাজবন্দীদের সঙ্গে ছাড়া পান।
কিন্তু এখনো অশিন উইরাথু ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার কারণে মিয়ানমারের হাজার হাজার মুসলিম প্রাণ হারিয়েছেন। অহিংসার বাণী ছড়িয়ে বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধধর্ম জনপ্রিয়তা লাভ করলেও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হয়ে অশিন উইরাথু নিজ দেশে বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধাতে চেষ্টার কমতি রাখছেন না। এজন্য তাকে আখ্যা দেয়া হয় ‘বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ওসামা বিন লাদেন’ হিসেবে।