মিমু (ছদ্মনাম) মেডিকেল কলেজে ভর্তির কোচিং করছেন। বরাবরই ভালো ছাত্রী। তবুও মা-বাবার চিন্তা কোনো কারণে যদি তাঁদের মেয়ে মেডিকেলে না টেকেন? তাঁদের দুশ্চিন্তা চাপ হয়ে যাচ্ছে মুমুর ওপর। যদি আসলেই কোনো কারণে মেডিকেলে না টেকেন তখন কী হবে? মুমুর ভীষণ ভয়। তাঁর বাবা-মা তো তাঁদের সহকর্মী আত্মীয়স্বজনের কাছে মুখ দেখাতে পারবেন না। চাপ অনুভব করে মুমু! অসম্ভব চাপ!
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা যে কারও জন্যই জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই একটা পরীক্ষায় খারাপ করলেই দেখা যায় জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায়। আর ছেলেমেয়ের জীবনের এত একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিয়ে স্বভাবতই তাঁদের বাবা-মা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন। সন্তানদের চাপ দিতে থাকেন বারবার। বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে উৎসাহ দিন। অমুক পেরেছে, তুমিও পারবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, সন্তানদের ফল নিয়ে বাবা-মায়ের যে উদ্বিগ্নতা আছে তা কোনোভাবেই তাঁদের ওপর আসতে দেওয়া যাবে না। কোনোভাবে তাদের লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া যাবে না, এতে তাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায় ও পরীক্ষা ভালো না হয়ে খারাপ হয়।
বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের সঙ্গে সুন্দর একটা পারিবারিক সময় কাটানো। কারণ পরীক্ষার আগেও পড়ার বাইরে একটা চিত্তবিনোদনের দরকার আছে। সন্তান যেন তা থেকে বঞ্চিত না হয়। আর যদি সন্তান ফল খারাপও করে ফেলে তখন আমাদের আশপাশের মানুষের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো, উৎসাহ দেওয়া। আমরা যদি তাকে হেয় করি, তার বাজে ফলের কথা স্মরণ করিয়ে দিই, তাতে তার মানসিক কষ্ট বহু গুণ বেড়ে যাবে। এই খারাপ ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভালো ফলের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
বস্তুত, সব মানুষেরই একটা সীমা আছে। একেকজনের সীমা একেক রকম। তাই আরেকজন পেরেছে বলে তার নিজের সন্তানও পারবে কিংবা তাকে পারতে হবে, এটা কোনো কথা হতে পারে না। তার সন্তানের সীমা হয়তো অন্য আরেকজনের চেয়ে বেশি কিংবা কম। প্রত্যেক বাবা-মায়ের তাই উচিত নিজ সন্তানদের ওপর একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি হতে না দেওয়া। বরং সন্তানকে নিজের সীমার মধ্যে থেকে ভালো কিছু করার জন্য উৎসাহ দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনেক পড়ালেখার প্রয়োজন আছে সত্যি। তবে সারা দিন পড়ালেখা করলে তা মস্তিষ্কে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। চিত্তবিনোদন জিনিসটা এমনি এমনিই সারা বিশ্বে এত গুরুত্ব পায় না! বাবা-মায়ের সেদিকটাও খেয়াল রাখা উচিত।