অতীতে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে ও শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে তাদের শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধন করা হয়েছে। এর বাইরে যারা বাংলাদেশে রয়েছে, তাদের নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুই ধরনের মানুষকেই বাংলাদেশ থাকতে দিচ্ছে। আর সেসঙ্গে দিচ্ছে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা। যাতে আবারো এ মানুষগুলো নিজ দেশে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে বণিক বার্তাকে এ কথা বলেন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার (অপারেশন) জর্জ অবো। তিনি বলেন, বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে কোনো শ্রেণীবিন্যাস করা যাবে না।
মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে আসা মানুষদের শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করছে জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তবে বাংলাদেশ তাদের শরণার্থীর পরিবর্তে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার পরিদর্শনে গিয়ে এদের (রোহিঙ্গাদের) শরণার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যতগুলো বৈঠক করেছে, সেখানে একটি বার্তাই পরিষ্কার করতে চেয়েছে। আর সেটি হলো, বাংলাদেশে থাকা সব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে শরণার্থী হিসেবেই দেখতে হবে।
ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পাচ্ছে। তবে এটাও সত্যি যে, এখানে ভিন্ন শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে। বর্তমানে চার ধরনের শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে। সেগুলো হলো— নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত, ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর নতুন করে আসা এবং চলতি বছরের আগস্ট থেকে আসা রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গাদের এমন শ্রেণীবিন্যাসে আপত্তি জানিয়ে ইউএনএইচসিআরের সহকারী কমিশনার বলেন, ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে একটি অবস্থানে পৌঁছাতে চায়, যেখানে সব শরণার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একইভাবে দেখা হবে। সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর ভেদাভেদ বাদ দিয়ে সবার সঙ্গে একই আচরণ করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইউএনএইচসিআরের অগ্রাধিকারের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা জরুরিভাবে তিনটি বিষয়কে জোর দিয়ে কাজ করছি। প্রথমত. আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর জোগান দিতে হবে। এটাকেই সবার আগে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। কারণ আপনি যদি কুতুপালং ক্যাম্পের দিক দিয়ে যান, তবে দেখবেন মিয়ানমার থেকে আসা প্রচুর মানুষ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। এদের অনেকেই ক্লান্ত এবং পরিশ্রান্ত। তারা রাস্তার পাশে বসে আছে সাহায্যের জন্য। তাদের পানি, পুষ্টি, খাদ্য, আশ্রয়স্থল, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক বিষয়গুলো প্রয়োজন। আমাদের সবার প্রথমে এ চাহিদাগুলো মেটাতে হবে।
জর্জ অবো বলেন, ইউএনএইচসিআরের দ্বিতীয় অগ্রাধিকারের বিষয় হচ্ছে এ মানুষগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সুরক্ষার বিষয়টি অপরিহার্য। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের যে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। একটি মানুষের পরিচয় নিশ্চিত করার বিষয়টি জরুরি। এ বিষয়ে আমরা আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। এখানে প্রচুর শিশু রয়েছে। এদের অনেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। আবার কেউ কেউ পুরো পরিবারই হারিয়েছে। এখানে প্রচুর বেঁচে যাওয়া নারী ও পুরুষ রয়েছে। এমন মানুষও রয়েছে, যারা তাদের সব হারিয়েছে।
ইউএনএইচসিআরের তৃতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে সহকারী হাইকমিশনার জর্জ অবো শরণার্থী শিবির ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় নতুন সংকট ঠেকানোকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এ জরুরি অবস্থার ভেতর দিয়ে নতুন করে যাতে আরো একটি জরুরি অবস্থা তৈরি না হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। বর্তমানে সেখানে ছোট জায়গার মধ্যে প্রচুর মানুষ অবস্থান করছে। পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসহ অনেকগুলো বিষয়ের ওপর চাপ রয়েছে। এ জরুরি পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে আরো একটি জরুরি পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। কোনো মহামারী দেখা দিতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাজের অনেকগুলো ক্ষেত্র থাকলেও প্রাথমিকভাবে আমরা তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি।