পরিস্থিতি জটিল রূপ নিচ্ছে: জাতিসংঘ

Slider সারাদেশ

 

পরিস্থিতি জটিল রূপ  নিচ্ছে: জাতিসংঘ

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোয় পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হচ্ছে। গতকাল বালুখালী শিবিরের কাছে ত্রাণ নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে দুটি শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছে। শরণার্থী শিবিরসংলগ্ন এলাকায় খুব দ্রুত সংকট ঘনীভূত হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক ও সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্কতা বার্তা  জানিয়েছে।

টেকনাফের বালুখালী পানবাজার এলাকায় শরণার্থী শিবিরের কাছে পদদলিত হয়ে গতকাল তিনজন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুটি শিশু ও একজন নারী। একটি পক্ষ অননুমোদিতভাবে রোহিঙ্গাদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে বলে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর বিবৃতির  বরাতে এএফপি জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দিষ্ট আইন ও নিয়ন্ত্রণকক্ষ থাকলেও শরণার্থী শিবির ও আশপাশ এলাকায় অনেকে ব্যক্তিগত ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।

জাতিসংঘ বলেছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এক সপ্তাহ অথবা তারও বেশি সময় ধরে হেঁটে বাংলাদেশে পৌঁছা রোহিঙ্গাদের অনেকে শরণার্থী শিবিরে জায়গা না পেয়ে কাদামাখা রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছে।

ইউএনএইচসিআর বলেছে, চলমান রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের এমন একটি জায়গায় অপরিসীম মানবিক দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে যে জায়গাটি আগে থেকেই শরণার্থী আগমন ও সাম্প্রতিক বন্যার কারণে চাপের মুখে ছিল এবং বিপুল সংখ্যায় নতুন শরণার্থীর ঢল সামলাতে প্রস্তুত ছিল না।

জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র আন্দ্রেস মাহেচিচ বলেছেন, চলতি সপ্তাহে ইউএনএইচসিআরের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার (অপারেশন্স) জর্জ অকথ-অবোর নেতৃত্বে সংস্থার একটি টিম ওই এলাকায় গিয়ে মানুষের সত্যিকার বিপন্নতা দেখতে পেয়েছে। সাম্প্রতিক কালের প্রকট কিছু শরণার্থী সংকটের সঙ্গে তারা (বাংলাদেশের) পরিস্থিতির সাদৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের মজুদ শেষ হয়ে গেছে বলেও মাহেচিচ সাংবাদিকদের জানান।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ ফেডারেশনের মুখপাত্র করিন অ্যাম্বলার এবিসিকে বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যা দেখেছি, তা বর্ণনার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এক কথায় বলা যায়, একেকটি শিবির হচ্ছে দেয়াল থেকে দেয়াল পর্যন্ত বিস্তৃত মানবিক দুর্ভোগ। নতুন আসা শরণার্থীরা জীবনের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে মরিয়া হয়ে পরস্পরের সঙ্গে লড়ছে।

রেড ক্রসের মুখপাত্র বলেন, নারী, পুরুষ ও শিশুরা ট্রাক দেখলেই ছুটে যাচ্ছে। যে যা পারছে, তা নিয়েই টানাটানি করছে। প্রতিদিন আমরা ভাবি, কাল হয়তো পরিস্থিতির অবনতি হবে না। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। একের পর এক ট্রাকবোঝাই হয়ে মানুষ আসছে।

চলমান সংকটে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ জানিয়েছে, এবার কমপক্ষে ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজারের বয়স এক বছরেরও কম। এছাড়া ৫২ হাজার নারী এসেছে, যারা সন্তানসম্ভবা অথবা স্তন্যদান করছে।

ইউনিসেফ মুখপাত্র মেরিজি মারকাদো বলেছেন, শরণার্থী শিবির ও সংলগ্ন এলাকায় রোগ বিস্তারের অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও পর্যাপ্ত শৌচাগার নেই। আগামী দিনগুলোয় মশার প্রকোপও বাড়বে। স্মরণ রাখতে হবে, সংকট শুরুর আগেই রাখাইন রাজ্যের অর্ধেক শিশু ক্রমাগত অপুষ্টিতে ভুগছিল। এর অর্থ হলো, আগে থেকেই তারা রোগের ঝুঁকিতে ছিল।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গতকাল নতুন আসা দেড় লাখ শিশুর জন্য পোলিও ও হামের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। ছয় মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের এ টিকা দেয়া হবে বলে সংস্থার মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় সাহায্য সংস্থাগুলো জরুরি তহবিলের আবেদন জানিয়েছে। চলতি বছরের বাকি সময়ের জন্য ইউএনএইচসিআর প্রাথমিকভাবে ৩ কোটি ডলার চেয়েছে। একইভাবে ইউনিসেফ তিন মাসের জন্য ৭৩ লাখ ডলার চেয়েছে। দুই লাখ শরণার্থীর জন্য ইউনিসেফ এ তহবিল চেয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণে উন্নীত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস, অক্সফামসহ অন্যান্য সংস্থাও রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি তহবিল চেয়ে দাতাদের কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছে। সংস্থাগুলো তহবিলের পাশাপাশি দাতাদের কাছে লোকবলও চেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *