‘পৃথিবীতে এতো জঘন্য অপরাধ হয়েছে কিনা জানা নেই’

Slider টপ নিউজ

 

'পৃথিবীতে এতো জঘন্য অপরাধ হয়েছে কিনা জানা নেই'

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় যেভাবে রাখাইন রাজ্যে শিশু-নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে তা অমানবিক। পৃথিবীতে এতো জঘন্য অপরাধ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

শিশু ও নারীদের উপর নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ এখন মায়ানমারে দেখা যাচ্ছে। তবে এর ভিতরে একটি বড় ভিকটিম হলো শিশুরা। মিয়ানমারের শিশু ও নারীরা বাংলাদেশে এসে রাস্তার পাশে ও পাহাড়ের চুড়ায় যেভাবে আশ্রয় নিয়েছে তা অত্যন্ত মানবিক। আর এই নির্যাতনে সবচেয়ে বেশি শিশুরাই শিকার হচ্ছে। শিশু, নারি, বৃদ্ধরা বেশি হলেও যুবকরা নেই।তিনি বুধবার দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) এর যৌথসভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

তিনি আরো বলেন, আমি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে এক চার বছরের শিশুর সাথে কথা বলে জেনেছি রাতের বেলায় তার বাড়িতে হানা দিয়ে সেনা সদস্যরা বাবা-মাকে গুলি করে হত্যা করেছে। শিশুটি পিছনের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে পালিয়ে বেচে যায়। তারপর ওই শিশুটি জনস্রোতের সাথে হাটতে হাটতে পাহাড়, জঙ্গল পাড় হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আর এমন চিত্র প্রায় সকলেরই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশেও আজ শিশু নির্যাতন বেড়ে গেছে। শুধু শিশু নির্যতন নয়, করা হচ্ছে শিশুদের ধর্ষণ। আর এসব হচ্ছে মূল্যবোধের প্রচন্ড অবক্ষয়ের কারণে। বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা। যার ফলে মানুষগণ আজ পাষবিক দিক দিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর এর ভয়াবহতার শিকার ছোটো ছোটো শিশু। শুধু তাই নয়, চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এমনকি আড়াই বছরের শিশুকেও ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে। আমরা মনে করি যারা এই পাষবিক মানষিকতা ধারণ করছে বা লালন করছে এবং শিশুদের প্রতি এই ধরণের লোমহর্ষক নির্যাতন করছে। তাদেরকে বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্ত শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
বিচারের প্রত্যেকটি স্তরে স্তরে যে সমস্ত একটরগুলো (চরিত্র) কাজ করছে। যেমন বিচারের তদন্ত থেকে শুরু করে মেডিকেল রিপোর্ট, কোর্টের আইনজীবী, স্বাক্ষী উপস্থাপন করাসহ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে কর্মকর্তা-কর্মচারী যার যেমন দায়িত্ব আছে সে সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। যাতে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারে শিশু নির্যাতন বন্ধে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং মায়ানমারের উপর আমাদের চাপ সৃষ্টি করতে হবে। শিশু, নারীসহ যেসব নির্যাতন এরা করছে তা বন্ধ করতে হবে।

এই মিয়ানমারে শিশুদের বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে যাদের বাবা-মা বেঁচে আছেন তাদের নিকট এবং তাদেরকে তাদের দেশে যাবার সুযোগ করে দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের একটা বড় দায়িত্ব আছে। যদিও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনেকগুলো দায়িত্ব পালন করেছে। তবে এখন যে সমস্যায় আছেন এসব মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রত্যেকটি শিশুকে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিশুদের চিকিৎসার প্রয়োজন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিশুরা এক কাপড়ে এছেসে তাদের বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। এইযে শিশুসহ যে মানুষগুলি এসেছেন বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থাও করতে হবে।

আগামীকাল মানবাধিকারের যে মিশন আসছে আমরা তাদের কাছে অনুরোধ করবো এবং জাতিসংঘের একটি মিশন এসেছে তাদেরকেও বলব যেন এ ব্যাপারে সকল ধরণের সহযোগিতা করেন। আমরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘে একটি চিঠিও দিয়েছি এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনকেও চিঠি দিয়েছি। এমনকি ইউনএস এর চীফকেও চিঠি দিয়েছি। শুধু তাই নয়, আশিয়ানের মেম্বার যারা রয়েছেন তাদেরকেও চিঠি দিয়েছি। শুধু তাই নয়, মায়ানমার মানবাধিকার কমিশনকেও চিঠি দিয়েছি। আমরা বলেছি যতদূর সম্ভব শিশুদের প্রতি আর যেন নির্যাতন না হয় এবং যেসব শিশুরা এসেছেন তাদের প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছি।

এ সময় ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাফায়েত জামিল নওশান, চাইল্ড পার্লামেন্টের স্পীকার মেফতাহুন নাহার, সেভ দ্যা চিলড্রেনের শেখ রহমতুল্লাহ রুমী, আবু জাফর মোহাম্মদ হোসাইন, প্লান ইন্টারন্যাশনালের ফারুক আলম খান, হোসনে কাদেরী মালা প্রমূখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *