নূরে কায়দা। ১০ বছর বয়সের এক শিশু।
মিয়ানমারের নাইচং এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগেও তার ছিল অনেক বড় স্বপ্ন। কিন্তু ২৪ আগস্টের পর ভেঙে যায় সব। নিজ জন্মভূমি থেকে পালাতে হবে— এমনটা ভাবতেই পারেনি নূরে কায়দা। শুধু তাই নয়, তার চোখের সামনে বাবাকে কেউ গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করবে, তাও ছিল তার কাছে অবিশ্বাস্য। সেই দৃশ্য দেখে মা ও ছোট্ট ভাইকে নিয়ে যখন দেশ ত্যাগ করবে, তখনই মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) হাতে তাকে আছাড় খেতে হবে তাও এ জন্মভূমির কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত। শুধু আছাড়ই নয়, তার ডান হাতটি মুচড়ে ভেঙে দেয় পাষণ্ড বিজিপি সদস্যরা। সেই ভাঙা হাত নিয়েই সাত দিনে লাম্বা বিল পাড়ি দিয়ে বালুখালীতে খোলা আকাশের নিচে গাছের তলায় ক্ষুধায় কাতর দৃষ্টিতে ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় দেখা যায় এই শিশুটিকে। তবে বাংলাদেশে আসার পর একটি ফ্রি মেডিকেল টিম তার হাতটি ব্যান্ডেজ করে দেয়। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় বালুখালী সড়কের কাস্টমসের সামনে একটি গাছের তলায়। একা বসে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু প্রচণ্ড ব্যথার কারণে হাত তুলতে পারছে না সে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানায়, পাশের একটি তাঁবুতে মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে থাকে সে। কিন্তু তাঁবুতে কোনো খাবার না থাকায় যন্ত্রণা নিয়ে নিজেই রাস্তার ধারে এসে অপেক্ষা করছে। মা কোথায় জানতে চাইলে নূরে কায়দা জানায়, তার ভাই ক্ষুধায় কান্না করছে। মা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। খাওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সে না সূচক জবাব দেয়। নূরে কায়দা জানায়, বাবাকে বিজিপি চোখের সামনে গুলি করে মেরে ফেলতে দেখেছে সে। মা তাকে ও ছোট ভাইকে নিয়ে কোনোমতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। সাত দিনে লাম্বা বিল হয়ে বালুখালীতে আশ্রয় নেয়। এখন প্রতীক্ষা তার হাত ও পেটের যন্ত্রণা কখন নিবারণ হবে।