কক্সবাজার যাচ্ছেন বিদেশি কূটনীতিকরা

Slider জাতীয়

82595_f7

 

 

 

 

 

 

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশের ধারাবাহিক কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ের মধ্যে গতকাল দেশ দুটি তাদের এ অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সার্ক ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর কূটনীতিকদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ব্রিফ করে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ব্রিফিংয়ে
মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এদিকে আগামীকাল ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের কক্সবাজার নিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন। সেখানে তারা বৈঠকও করবেন। সোমবার দক্ষিণ এশিয়া, দূরপ্রাচ্য ও আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর কূটনীতিকদের ব্রিফ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ভারত ও চীন দুটি দেশই আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। তারা এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা এই দুঃখকালীন, কষ্টকালীন সময়ে আমাদের পাশে থাকবে আগে যেভাবে থেকেছে। কিছুদিন আগে ভারত বলেছিল মিয়ানমার যা করছে ঠিক করছে, এখানে বিষয়টা অন্তর্দ্বন্দ্বমূলক হলো কিনা-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমার মনে হয় ব্যাখ্যাটা ওইভাবে দেয়া ঠিক হবে না। যেটা বাংলাদেশকে ওনারা আজকে বলেছেন আমি সেটিই বললাম। মিয়ানমারের কাছ থেকে আমরা কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার বাংলাদেশ চাইবে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সেটার সময় এখনো আসেনি। কূটনীতিকদের ব্রিফিং সম্পর্কে সচিব জানান, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের ব্রিফ করেছেন। রাখাইনের এ অবস্থার কারণে প্রায় ৭ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এর ফলে একটা মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে তিনি ব্রিফ করেছেন। এটা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে এর আগে যে আবেদন করেছেন আজও সেই আবেদন রাখা হয়েছে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনে থাকা সুপারিশগুলো পুরোটাই বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান শহীদুল হক। তিনি বলেন, কমিশনের সুপারিশ আংশিকভাবে না, পুরোটাই অতিসত্ত্বর বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে। সেখানে যে অত্যাচার ও নির্যাতন হচ্ছে তা আগে বন্ধ করতে হবে যাতে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ বন্ধ হয়। প্রয়োজনে প্রতিবেদন অনুসারে ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে দেশে ফিরে যাবে। সচিব আরো জানান, এখানে যারা এসেছেন তারা সবাই বাংলাদেশের ওপর যে বোঝা এসেছে সেটার ব্যাপারে এবং মানবিক যে বিপর্যয় ঘটছে সে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কূটনীতিকরা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সবাই। এদেরকে আশ্রয় দিতে যেসব সাহায্য প্রয়োজন তা প্রদান করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ব্রিফিংয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই আমন্ত্রণ দেইনি। বাংলাদেশ কূটনীতিকদের কাছে কি ধরনের সহায়তা চেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলিনি। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তারা বিষয়টি দেখবে। বুধবার কূটনীতিকদের বৈঠকে খোলামেলা আলোচনা হবে। সেইফ জোনের বিষয়টা বাংলাদেশের আগের প্রস্তাব ছিল। বর্তমানে এটা এখনো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার মধ্যে আছে। সামনের সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার টিম আসবে। তারা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। এর আগে ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, গত রোববার পশ্চিমা ও আরব দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যা কথা হয়েছে এদের সঙ্গে একই কথা হয়েছে। আগামী বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত সকল রাষ্ট্রদূতকে কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হবে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে আফগানিস্তান, ব্রুনেই দারুস সালাম, চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মালদ্বীপের কূটনীতিকরা অংশ নেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব ছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত রোববার ঢাকায় থাকা পশ্চিমা ও আরব দেশের কূটনীতিক এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে ব্রিফ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *