দুই কিডনি হারিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী ঠাকুরগাঁওয়ের মান্নান

Slider গ্রাম বাংলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

PicsArt_09-11-06.29.27

এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ মানুষ মরণশীল, মরতে তাকে হবেই। তবে বিভিন্ন অসুখ যখন শরীরে বাসা বাঁধে তখন তা মানুষটিকে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু সেও চায় সুস্থ-সুন্দরভাবে বাচঁতে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৩নং গড়েয়া ইউনিয়নের মিলনপুর গ্রামের দিনমজুর মো. ফজলুল হক ও গৃহিণী মোছা. মোর্শেদা খাতুনের একমাত্র সন্তান ১৭ বছর বয়সী মো. আব্দুল মান্নান।

এই বয়সে তার কলেজ ক্যাম্পাস, খেলার মাঠ চষে বেড়ানোর কথা থাকলেও মূলত তার সময় কাটছে বিছানায় শুয়ে-বসে। বারবার ঘরের ঝোলানো ঘড়িটার দিকে তাকায় সে, এই বুঝি তার সময় ফুরিয়ে এসেছে।

গরীব পরিবারে জন্মেও সফলতার সাথে ২০১৫ সালে এসএসসি পাশ করে স্থানীয় সালন্দর ডিগ্রী কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হয় মান্নান। তার ইচ্ছে বড় হয়ে সে বড় মাপের ব্যবসায়ী হবে।

সেবছর মান্নানের শরীরে বাসা বাঁধে এক মরণব্যাধি। টাকা জোগাড় করে শহরের বড় ডাক্তারকে দেখানোর পর তার কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়লো। ডাক্তার বললেন, দ্রুত অপারেশন না করাতে পারলে তার দুই কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। এতে মান্নান মৃত্যু হবে।

দুবছর চেষ্টা করেও গরীব দিনমজুর ফজলুল ছেলের অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে পারেননি।

গত জুনে মান্নানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তার দুটো কিডনিই অকেজো হয়ে পড়েছে। দ্রুত অপারেশন না করলে তার দুই কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মান্নান হাঁটা-চলা করতে পারেনা ঠিকভাবে। পাঁচ কদম হাঁটলেই বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ে।

মৃত্যুপথযাত্রী ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে আর বসে থাকতে পারেননি দিনমজুর ফজলুল। ছেলের জীবন ভিক্ষা চেয়ে বেড়িয়েছেন গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে।

এরপর তিনি সাহায্যের জন্য আবেদন করেন ১৩ নং সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট। তিনি দ্রুত মিটিং ডেকে তার জন্য কিছু করবেন বলে কথা দেন।

মৃত্যুপথযাত্রী মান্নানের খবর শুনে ছুটে যাই তার বাসায়। এক ঘন্টা অবস্থান করে মান্নানের রিপোর্ট, সার্টিফিকেটগুলো দ
দেখি, গ্রামবাসীর সাথে কথা বলি। পুরো সময়ে মান্নানের মুখে একটি শব্দ উচ্চারণ করতে দেখিনি। শুধু ঘড়ির দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি।

কাঁদতে কাঁদতে মান্নানের মা-বাবা বলেন, মান্নান বাঁচতে চায়। মা-বাবা হয়ে চোখের সামনে ছেলের মরামুখ দেখতে পারবোনা। আপনারা কেউ সাহায্য করুন।

মৃত্যুপথযাত্রী মান্নানকে বাচাঁতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ১৩ নং সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য সহ স্থানীয় সুশীল সমাজ।

সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো সুস্থ হয়ে পৃথিবীর আলো উপভোগ করতে পারবে আব্দুল মান্নান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *