সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাতে রোহিঙ্গা মুসলিমরা ভারতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আসাম-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর নজরদারি জোরদার করেছে রাজ্য পুলিশ। রাজ্য পুলিশের ডিজি পল্লব ভট্টাচার্য জানান, ‘গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে অাসামে কোন রোহিঙ্গা মুসলিমের অনুপ্রবেশের খবর নেই।
কিন্তু এই ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঠেকাতে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমরা ইতিমধ্যেই করিমগঞ্জ, কাছর, হাইলাকান্দি, ধুবড়ি, দক্ষিণ সালমারা জেলার পুলিশকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ইস্যুতে সতর্ক করেছি। বিষয়টি নিয়ে বিএসএফ ও অন্যান্য নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করা হয়েছে বলে জানান অাসামের ডিজিপি।গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে অসমের করিমগঞ্জ পুলিশ ছুরাইবাড়ি এলাকা থেকে ৬ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে আটক করে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য দিয়ে তারা অাসামে অনুপ্রবেশ করে বলে খবর। পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ওই ছয় রোহিঙ্গা রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে বাংলাদেশে আসে এরপর অাসাম হয়ে নেপালে পালিয়ে যাওযার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে ৩৬৪ কিলোমিটার বিস্তৃত মিয়ানমার-মনিপুর সীমান্তেও। মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন.বিরেন সিং জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে মনিপুরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অরক্ষিত এবং মনিপুরে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে’। অতীতেও মিয়ানমার থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা অবৈধভাবে মনিপুরে প্রবেশের অভিযোগে তাদের কারাগারের সাজা ভোগ করতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সূত্রের খবর, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগামী সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অাসামসহ বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী রাজ্যের শীর্ষ কর্মকর্তা, সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিএসএফ এবং অন্য নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার কারণে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার পুলিশের ওপর রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হামলার পরই নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। ওই সহিংসতায় প্রায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও। নরেন্দ্র মোদি সরকার চায় অত্যন্ত সংযমভাবে ও দায়িত্বপূর্ণতার সাথে মিয়ানমার সরকার এই সমস্যা মোকাবিলা করুক। অতি সম্প্রতি দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুও জানান, আইন মেনেই ভারতে বসবাসরত অবৈধ মুসলিমদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। মন্ত্রীর অভিমত সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতেই বেশি সংখ্যায় উদ্বাস্তু বসবাস করেন, অতএব উদ্বাস্তু সমস্যা মেটানোর জন্য আমাদের কারও উপদেশ নেওয়ার দরকার নেই।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশের কয়েকটি জায়গায় ইতিমধ্যেই বিক্ষোভও দেখানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ব্যাপারে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্ন সূত্রে খবর উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা এ রাজ্যে থাকতে চাইলে মানবিকতার খাতিরেই তাদের থাকতে দেওয়া হবে।