রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত যাওয়ার সব পথ আটকে দেয়া হয়েছে। গোটা সীমান্তজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ফোর্স।বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাহাড়ি সীমান্ত পয়েন্টগুলো সরেজমিন এবং নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, মিয়ানমারের পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রী ইন মিয়াট আয় শনিবার জানিয়েছেন, যে রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে তাদের সবাইকে ফিরে আসতে দেয়া হবে না। যারা প্রমাণ করতে পারবে যে তারা মিয়ানমারে বাস করতো এবং মিয়ানমারের নাগরিক শুধু তারাই ফিরে যেতে পারবে।
অন্যদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মুভম্যান্ট অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। বর্মী বাহিনীর শত শত সদস্যের টহল এবং নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টি বাংলাদেশে নিরাপত্তারক্ষীদের কড়া নজরদারিতে রয়েছে বলেও জানা গেছে। ওই এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৩৪ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খানের সঙ্গে সীমান্ত লাগোয়া বিওপিতে কথা হয়।
সকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিজিপি)-এর এমন তৎপরতার বিষয়টি তিনিও পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে স্বীকার করেন লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান।
কুতুপালং এলাকা ঘুরে আরও দেখা গেছে, নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপি কড়া প্রহরা দিচ্ছে। তমব্রু সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ থাকা অন্তত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা দুপুরে একসঙ্গে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তারা এসে জড়ো হয় কুতুপালং, বালুখালী, থাইনখালী ও পালংখালীতে। এসব এলাকায় বেশ কয়েক দিন ধরেই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এখনো অধিকাংশ খোলা আকাশের নিচে তাঁবু ছাড়াই অবস্থান করছে। গতকাল তিন দফা বৃষ্টিতে তাদের ভিজতে দেখা গেছে। রাস্তার দুই ধারে ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় ছিল তারা। বয়োবৃদ্ধ অনেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
সীমান্তের গত কদিনের অবস্থা বর্ণনা দিয়ে বিজিবির সিও বলেন, ২/৩ দিন ধরে আমার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার নো-ম্যানস ল্যান্ডে রাখাইন থেকে খুব একটা রোহিঙ্গা আসছে না। আগে তারা পাহাড় বেয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতো। অনেকেই নো-ম্যান্স ল্যান্ডের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতো। সীমান্তের ওপারের জনপদে গত সপ্তাহেও বাড়িঘরে আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে। ২/১ দিনে ওই লোকালয় অনেকটা শান্ত। সেখানে নিরাপত্তাবাহিনী ছাড়া খুব একটা সাধারণ লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ছে না।
এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) খালিদ মোহাম্মদ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যেসব পথ দিয়ে আসছে, তাদের ১৭টি বিশেষ পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা মিয়ানমার থেকে এসেছে সবাইকে তালিকভুক্ত করা হবে। চাইলেই যাতে তাদের খোঁজ পাওয়া যায় সে জন্য তাদের ছবি, আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।