অবশেষে বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে কক্সবাজারে বিশ্বমানের রেলস্টেশন। দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের আওতায় ঝিনুক আকৃতির এ রেলস্টেশনটির নির্মাণকাজ আগামী মাসেই শুরু হবে।
প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আট অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি আজ সকালে প্রকল্প সাইট পরিদর্শন করবেন। বিকালে মন্ত্রী দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন, প্রস্তাবিত রেলওয়ে জংশনের সাইট পরিদর্শন ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন। এ রেলস্টেশনটির কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের মধ্যে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন স্থাপিত হলে যোগাযোগসহ দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলবে। ব্রড-গেজসহ ডুয়েল লাইনের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এ প্রকল্পটি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন শহর কক্সবাজার রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এতে পর্যটনশিল্পের যেমন বিকাশ ঘটবে, তেমনি বিস্তৃত হবে সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যও। এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটার-গেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রেলসূত্র জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পর্যটক আকর্ষণ করতেই এই আইকনিক ইন্টারন্যাশনাল রেলস্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঝিনুক আকৃতির এ স্টেশন দেখলেই বোঝা যাবে এটি সমুদ্রসৈকতের স্টেশন। স্টেশনটির অবস্থান হবে কক্সবাজার বাস টার্মিনালের বিপরীতে চৌধুরীপাড়ায়। প্রকল্পে যা আছে : দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার— এই মোট ১২৮ কিলোমিটার নতুন ডুয়েল-গেজ রেললাইন নির্মাণ। ১২৮ কিমি রেলপথে স্টেশনের সংখ্যা থাকছে নয়টি। এগুলো হলো : সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ার সাহারবিলের রামপুর, ডুলাহাজারা, ঈদগাহ, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও ঘুমধুম। এতে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম নয়টি ও ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম নয়টি থাকবে। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে সেতু। এ ছাড়া ৪৩টি মাইনর সেতু, ২০১টি কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেঁওচিয়ায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং এবং রামু ও কক্সবাজারে দুটি হাইওয়ে ক্রসিং নির্মাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে।
উদ্দেশ্য : পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগব্যবস্থার প্রবর্তন। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডর মিসিং লিঙ্ক নির্মাণ।
প্রকল্প ব্যয় : গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকের আগে প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ২৫৮ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত বছরের এপ্রিলে প্রকল্প ব্যয় আরও বেড়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকায় স্থির হয়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য পাকিস্তান আমলে ১৯৫৮ সালে জরিপ চালানো হয়েছিল। এরপর ১৯৭১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেললাইনটির ট্রাফিক সম্ভাবনা ও সমীক্ষা চালিয়েছিল জাপান রেলওয়ে কারিগরি সার্ভিস (জেআরটিএস)। দেশ স্বাধীনের পর প্রকল্পটি আটকে যায়। ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে আরেক দফা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছিল।