ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল দুদিনের সফরে মিয়ানমার গেছেন। রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার কারণে মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা ও উদ্বেগের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী সে দেশে গেলেন। সফরকালে তিনি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
চীনের জিয়ামেন শহরে ব্রিকস জোটের সম্মেলনে যোগদান শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকালে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় পৌঁছেন। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট তিন খ্যর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি নেপিদোর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন। সন্ধ্যা ৭টায় তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ভোজসভায় অংশ নেন। আজ তিনি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
নয়াদিল্লিতে কর্মকর্তারা বলেছেন, সফরকালে নরেন্দ্র মোদি নিরাপত্তা, সন্ত্রাস মোকাবেলা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এর আগে নরেন্দ্র মোদির সরকার ভারতে অবস্থানরত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। নতুন করে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার দেশ ত্যাগের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সফরে গেলেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সু চির সঙ্গে আলোচনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পলায়নের বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভারত সরকার রাখাইন প্রদেশে তাদের প্রস্তাবিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে জোরারোপ করতে পারে। ভারতের কর্মকর্তাদের কথায় তেমন আভাসই মিলেছে। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, রাখাইন অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের সেরা উপায় হলো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেয়া।
পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে নেপিদো শহরে তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি ঘোষণা করেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সংযুক্তি বাড়াতে মোদি সরকার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডকে নিয়ে একটি ত্রিদেশীয় মহাসড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দেন। এছাড়া কলকাতা বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরের দূরত্ব কমাতে নরেন্দ্র মোদি ‘কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেন। ভারতের মিজোরাম এবং মিয়ানমারের রাখাইন ও শিন প্রদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কালাদান নদীকে ঘিরে সড়ক ও জলপথভিত্তিক অবকাঠামো প্রস্তাব করেন তিনি। মিয়ানমার সফরকালে অন্যান্য আলোচনার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার এসব প্রস্তাবনা রূপায়ণের কাজ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাবেন।