চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বেসরকারি ডিপোয় (আইসিডি) কনটেইনার পরিবহনের ব্যয় শিপিং এজেন্টদের বহন করার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না শিপিং এজেন্সির মালিকরা। ফলে এ বাড়তি ব্যয় আমদানিকারকদেরই বহন করতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে শিপিং এজেন্টরা আইসিডি নীতিমালা-২০১৬ লঙ্ঘন করছেন বলে ব্যবসায়ী নেতারা অভিযোগ করেছেন।
আইসিডি নীতিমালা-২০১৬ এর ৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, বিল অব লেডিং/ট্রান্সপোর্ট ডকুমেন্টের ওপর আইসিডির নাম উল্লেখ থাকতে হবে এবং শিপিং এজেন্ট/এমএলও নিজ দায়িত্বে ও নিজ খরচে ডকুমেন্টে উল্লিখিত নির্দিষ্ট আইসিডিতে কনটেইনার পরিবহন করবে। কিন্তু শিপিং এজেন্টগুলো আইসিডি নীতিমালার এ ধারা লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, বন্দর থেকে বেসরকারি আইসিডিতে কনটেইনার পরিবহনের খরচ শিপিং এজেন্টগুলোর বহন করার কথা থাকলেও তারা তা করছে না। অন্যদিকে আইসিডি মালিকপক্ষও এ খরচ বহন করতে রাজি নয়। এ জটিলতার কারণে বন্দর থেকে বেসরকারি আইসিডিতে কনটেইনার পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে বন্দরে বেসরকারি আইসিডিগামী কনটেইনারের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আমদানিকারকরা সময়মতো পণ্য খালাসে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে তাদের বাড়তি মাশুল পরিশোধ করতে হচ্ছে ও কনটেইনারগুলো নিজেদের খরচে বেসরকারি আইসিডিতে নিয়ে যেতে হচ্ছে।
তিনি জানান, বেসরকারি আইসিডিতে নিয়ে যেতে আমদানিকারকদের কনটেইনারপ্রতি প্রায় ৬ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। এছাড়া যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে না পারায় তাদের বন্দর কর্তৃপক্ষকে ডেমারেজ চার্জ দিতে হচ্ছে।
মাহবুব চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহেও আমরা তাদের লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কোনো তদারকি না থাকায় আমরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।
জানা গেছে, কনটেইনারগুলো বন্দর থেকে বেসরকারি ডিপোয় পরিবহনের খরচ শিপিং এজেন্ট বহন না করায় সেগুলো সময়মতো স্থানান্তর হচ্ছে না। অন্যদিকে ডিপোর মালিকপক্ষও এসব কনটেইনার পরিবহন না করায় নির্ধারিত সময়ে পণ্য খালাস করতে পারছেন আমদানিকারকরা। যদিও বন্দরে কনটেইনার নামানোর পর দ্রুত সেগুলো বেসরকারি ডিপোয় নিয়ে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। কনটেইনার পরিবহনের খরচ নিয়ে শিপিং এজেন্টগুলোর সঙ্গে আমদানিকারক ও ডিপো মালিকদের দ্বন্দ্বের কারণে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে পড়ে থাকে কয়েক হাজার কনটেইনার। বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী, পণ্যভর্তি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে নামানোর চারদিনের মধ্যে খালাস না নিলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য কনটেইনার বাবদ বাড়তি মাশুল পরিশোধ করতে হয় আমদানিকারকদের।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে বেসরকারি ডিপোগামী কনটেইনার সময়মতো খালাস না করার কারণে পাঁচ হাজারের বেশি কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে পড়ে রয়েছে। এসব কনটেইনার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বন্দর থেকে সংশ্লিষ্ট ডিপোয় স্থানান্তরের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। সম্প্রতি এসব কনটেইনারের চাপে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সেগুলো দ্রুত সরিয়ে না নিলে বাড়তি জরিমানার আরোপের বিষয়ে সতর্ক করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহন খরচ একতরফাভাবে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি কারো কোনো অভিযোগ থাকে, তবে তারা আমাদের লিখিতভাবে জানাতে পারেন। আমরাও লিখিতভাবে তার উত্তর দেব।