ভারতের সাংসদ ও বিধায়ক মিলিয়ে মোট ৫১ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেই নারী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ ও অপহরণের মতো মারাত্মক অভিযোগও।
সম্প্রতি দেশজুড়ে পরিচালিত একটি জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি করেছে নির্বাচনী সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্ম (এডিআর) নামে একটি বেসরকারি সংগঠন ও ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ (এনইডব্লিউ)।
জরিপে দেশ জুড়ে ৭৭৪ জন সাংসদ ও ৪০৭৮ জন বিধায়ক (মোট ৪৮৫২ জন জনপ্রতিনিধি)-এর নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ১৫৮১ (৩৩ শতাংশ) জন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রয়েছে এবং ৫১ জন সাংসদ ও বিধায়কের বিরুদ্ধে নারী ঘটিত বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ, পাচার, অপহরণ, নারীকে জোর করে বিয়েতে বাধ্য করা, কোন নারীর স্বামী বা স্বামীর বন্ধুর দ্বারা নির্যাতিত হওয়া, নাবালিকাকে পতিতাবৃত্তির কাজে নিযুক্ত করা ইত্যাদি।
এই তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে বিজেপি। গেরুয়া দলটির ১৪ জন সাংসদ ও বিধায়ক নারী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত। এরপর রয়েছে শিবসেনা (৭ জনপ্রতিনিধি), তৃতীয় স্থানে রয়েছে মমতার ব্যানার্জি নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস (৬ জনপ্রতিনিধি)।
গত পাঁচ বছরে এই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত ৪৫৬ জন ব্যক্তি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনে লড়াই করেছেন। এর মধ্য ৩৩৪ জন অভিযুক্তই ছিলেন নামী রাজনৈতিক দলের। ৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে লোকসভা বা রাজ্যসভা নির্বাচনে।
দেশটির কেন্দ্রে শাসকদলের ভূমিকায় রয়েছে বিজেপি পাশাপাশি ভারতের ১৮টি রাজ্যের এই মুহূর্তে কোথাও একক ক্ষমতায় কোথাও আবার জোট সরকার চালাচ্ছে বিজেপি। সেখানে গত পাঁচ বছরে ৪৮ জন অভিযুক্তকে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। ওই একই সময়ে মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ৩৬ জন প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে এবং ২৭ জন অভিযুক্তকে প্রার্থী করেছে জাতীয় কংগ্রেস।
ভারতজুড়ে যে ৫১ জন জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এই নারী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে সাংসদ রয়েছে ৩ জন। এর মধ্যে রয়েছে শিবসেনার রাজ্যসভার সাংসদ রাজকুমার দূত, তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার কেন্দ্রের লোকসভার সাংসদ পার্থ প্রতীম রায় এবং কেরলের স্বতন্ত্র দলের লোকসভার সাংসদ জয়েস জর্জ। রাজকুমার দূত ও জর্জের বিরুদ্ধে নারীর শ্লীলতাহানি এবং পার্থ প্রতীমের বিরুদ্ধে নারীকে পতিতাবৃত্তির কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
রাজ্যগুলির মধ্যে এই অভিযোগের ক্ষেত্রে সবার প্রথমে রয়েছে মহারাষ্ট্র। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যের ১২ জন জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা ঝুলছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, রাজ্যটির ১১ জন জনপ্রতিনিধি এবং ওড়িষ্যার ৬ জন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এই ধরনের মামলা রয়েছে।
শুধু তাই নয়, এই ধরনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে নির্বাচনী প্রার্থী করার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে মহারাষ্ট্র। এরাজ্যের এমন ৬৫ জন প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যাদের বিরুদ্ধে নারী ঘটিত বিভিন্ন অপরাধের মামলা রয়েছে। এর ঠিক পরেই রয়েছে বিহার (৬২), পশ্চিমবঙ্গ (৫২) জন। নির্বাচনে প্রতিটি প্রার্থীর তরফে দাখিল করা হলফনামা থেকেই এই তথ্য জানা গেছে।
দেশটির যে চার বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে তারা হলেন অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে তেলেগু দেশম পার্টির বিধায়ক গোনুগুন্তলা সূর্যনারায়ণা, ওড়িষ্যা থেকে কংগ্রেসের সুবল সাহু, গুজরাট থেকে বিজেপির বিধায়ক জেঠাভাই জি.আহির এবং বিহার থেকে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের বিধায়ক গুলাব যাদব।