নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা

Slider সারাবিশ্ব

129b48b63ab4996de4494a527142d765-59a6deb58cacd

 

 

 

 

 

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা ও আশারতলি সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে গত পাঁচ দিনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তারা ছয়টি সীমান্ত পয়েন্টে পাহাড়ে পলিথিন টাঙিয়ে আছে। খেয়ে না খেয়ে, পানীয় জলের সংকটে অমানবিক অবস্থায় রয়েছে তারা। প্রতিদিন সেখানে রোহিঙ্গারা আসছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নাইক্ষ্যংছড়ির ৩১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ারুল আজিম বলেছেন, আজ বুধবার পর্যন্ত ছয়টি আশারতলি ও চাকঢালা সীমান্তে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে চাকঢালা সীমান্তের বড় শনখোলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুর্গম পাহাড়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। হাঁটা ছাড়া সেখানে যাওয়া যায় না। বিজিবি সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না জানালেও প্রতিনিয়ত কক্সবাজারের রামু, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর থেকে শত শত লোকজন রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়া-আসা করছে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক ও পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় ওই রোহিঙ্গা শিবির দেখতে যান। কিন্তু তাঁরা দূরে থেকে দেখে ফিরে আসেন এবং সাংবাদিকদেরও রোহিঙ্গা শিবিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
বিজিবি যেখানে পাহারা দিচ্ছে সেখানে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে ডেকে নিয়ে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা মারাত্মক খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটে রয়েছেন। ফজর আহমদ ও হাফেজ আহমদ নামের দুজন বললেন, তাঁরা খাবার আনার জন্য বাড়িতে যেতে পারছেন না। আবার বাংলাদেশেও ঢুকতে পারছেন না। বাংলাদেশের যাঁরা দেখতে আসছেন, তারাই চাল-ডাল ও বিস্কুট, চিড়াসহ বিভিন্ন শুকনো খাবার দিচ্ছেন। আর তা খেয়েই রয়েছেন তাঁরা। অনেকে সঙ্গে নিয়ে গরু ও স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে খাবার সংগ্রহ করছেন। আবদুল মজিদ বলেন, বিশুদ্ধ পানি নেই। শিবিরের পাশে ছোট্ট একটি ছড়া থেকে হাজার হাজার মানুষ পানি ব্যবহার করছে। যেকোনো সময় রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাফেজ আহমদ, আবদুল মজিদ বলেন, আজ বুধবারও বড় শনখোলায় শতাধিক পরিবার এসেছে এবং এখনো আসার পথে রয়েছে আরও বেশ কিছু পরিবার।
হাসমত আলী এসেছেন উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির থেকে বোনকে দেখার জন্য। বোনের পায়ে গুলি লেগেছে। এখন সেখানে চিকিৎসা ছাড়া নো ম্যানস ল্যান্ডে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ও আহত বোন লালমতি বেগম পড়ে রয়েছেন। আজুমার বেগমও সঙ্গে কিছু চাল ও শুকনো খাবার নিয়ে উখিয়া শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বোনকে দেখতে এসেছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান তাসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, তাঁর ইউনিয়নে বড় শনখোলা নিকুঞ্জছড়ি, চেরারমাঠ, রাবারবাগান, প্রধানঝিরি—এই পাঁচ স্থানে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে।
আজ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় জেলা প্রশাসন দিলীপ কুমার বণিক, বিজিবির ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা রোহিঙ্গারা অবস্থানে কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বাইরের লোকজন সেখানে গিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছে। এতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *