ঢাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মার্কিন সহকারী মন্ত্রী (ভারপ্রাপ্ত) এলিস জি ওয়েলস। গতকাল ভোরে বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর থেকে সিরিজ বৈঠক করে চলেছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এরই মধ্যে তার আলোচনা হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে। মতবিনিময় করেছেন নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে তার সফর শেষ হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন সহকারীমন্ত্রীর বৈঠক বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। জবাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিনমন্ত্রী। জনবহুল বাংলাদেশের ওপর রোহিঙ্গাদের যে বাড়তি চাপ এবং বর্ডারে যে অস্থিরতা চলছে তার বিস্তারিত অবহিত করেন মন্ত্রী মাহমুদ আলী। রাখাইনে শান্তি ফেরাতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জান্তিক কমিশন সম্প্রতি যে রিপোর্ট দিয়েছে তা-ও বাংলাদেশ সমর্থন করে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে জানান মন্ত্রী। এদিকে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় প্রথম ঢাকায় আসা স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়ার ডেস্কের প্রধান এলিস ওয়েলসের সফরের সূচনাতে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, এলিস ওয়েলস বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তার আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, জ্বালানি ও আঞ্চলিক বিষয়াদি। ঢাকা থেকে কলম্বো যাবেন তিনি। সেখানে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কলম্বো সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্রগুলোও এলিসের সফর নিয়ে প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়েছে। জানিয়েছে, মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর সফরে সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা দমনে ঢাকা-ওয়াশিংটন বিদ্যমান সহযোগিতা জোরদারকরণ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং দুই স্বার্থসংশ্লিষ্ট চলমান ইস্যুগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে উগ্রপন্থার বৈশ্বিক উত্থান এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। নিরাপত্তার সঙ্গে উল্লিখিত সব বিষয়ই যুক্ত বলে মত এসেছে। উল্লেখ্য, মার্কিন সহকারী মন্ত্রী এমন এক সময় ঢাকা সফর করছেন যখন বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চল সীমান্ত লাঘোয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সংঘাত চলছে। রাখাইনে বর্মী সেনা এবং উগ্রপন্থি বৌদ্ধদের নৃশংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রয় নিয়েছে। দিকভ্রান্ত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা বাংলাদেশে ঢোকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কয়েক হাজার এরই মধ্যে ঢুকেও পড়েছে। জনবহুল বাংলাদেশ প্রায় ৩ দশক থেকে মিয়ানমারের ৪ লাখ নাগরিককে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিয়ে চলেছে। তাদের নিজ ভূমে ফেরানো এবং রাখাইনে তাদের অধিকারসহ শান্তিপূর্ণ বসবাসের পরিবেশ নিশ্চিত করতে মিয়ানসমারসহ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সহায়তা চেয়ে আসছে। সীমান্তের শূন্য রেখায় অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় নিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর সফরের প্রথম দিনে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।