ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ দিন কয়েকের মধ্যেই ঈদুল আজহা। বন্যা কবলিত ঠাকুরগাঁওয়ে আগস্টের মাঝপথে বসতে শুরু করে পশুর হাটগুলো। তবে শুরুর দিকে ক্রেতার সমাগম তেমন ছিল না। তবে শেষমুহুর্তে এসে জমে উঠেছে পশুর হাটগুলো। হাটে প্রচুর পরিমাণে গরু-ছাগল আসছে, ক্রেতার সমাগম কিংবা বেচাকেনাও বেড়েছে গত ক’দিনের চেয়ে। তাই শেষমুহূর্তেও হাটগুলো ফিরে পেয়েছে প্রাণ।
তবে শেষমুহূর্তে এসে বেজায় বিপদে পড়েছেন মালিক ও ব্যবসায়ীরা। অনেক খামার মালিক ও ব্যবসায়ীরা গরু-ছাগল বিক্রি করতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন। আর সেই হতাশাকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে হাটে ভারতীয় গরুর আগমন। অনেকেই পানির দামে বেচে দিচ্ছেন গরু-ছাগল।
ঠাকুরগাঁও জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৫ টি পশুর হাট বসেছে। এসব হাটগুলো অবস্থান গড়েয়া, খোঁচাবাড়ি, ফাঁড়াবাড়ী, নেকমরদ, লাহিড়ী, মাদারগঞ্জ, রামনাথ ও কাতিহার যাদুরানী এলাকায়।
কোরবানি উপলক্ষে এসব হাটে প্রচুর পরিমাণে গরু-ছাগল আমদানি হচ্ছে। দেশীয় খামারে মোটাতাজাকৃত গরুসহ ভারতীয় গরুও রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগলও।
এবারের হাটে ভারতীয় গরুর পরিমাণ আগের যেকোনো বারের তুলনায় অনেক বেশি। হাটে ভারতীয় গরুর উপস্থিতির কারণে অনেক ক্রেতা দেশী গরু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
জেলার গড়েয়া ও খোঁচাবাড়ি হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর পরিমাণে গরু-ছাগল আমদানি হয়েছে। দেশীয় খামারে মোটাতাজাকৃত গরুর পরিমাণ বেশি। তেমনি ভারতীয় গরুর উপস্থিতিও বেশ লক্ষণীয়।
গরু ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ ও সোহরাব আলী জানান, কুরবানি উপলক্ষে তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু কিনে এনেছেন। শুরুর দিকে বেশ ভালো দামে গরু-ছাগল বিক্রি করলেও শেষমুহূর্তে ক্রেতারা যে দাম বলছেন তাতে গরু প্রতি ৫-১০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।
তারা আরও জানান, খড়, খৈল, খুদ, ফিড, কাঁচা ঘাস থেকে শুরু করে সকল প্রকার স্বাস্থ্যকর জিনিসের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। সারা বছর একটি গরু পালন করতে যে ব্যয় হয় সে তুলনায় গরুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
আব্দুর রহমান নামে এক ইজারাদার জানান, গত বছর এই সময়ে রশিদ দিতে দিতে ফুরসত পাওয়া যেত না, আর এ বছর হাটের শুরুর দিকে দিনে ৩-৪ টি গরু বিক্রির রশিদ করতে পেরেছিলেন আর শেষমুহুর্তে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০-২৫ এ।
জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ঈদে ঠাকুরগাঁও জেলায় পশুর চাহিদা প্রায় ৩৫-৩৬ হাজার। আর জেলার বিভিন্ন খামার ও বাসা বাড়িতে গরু প্রায় ৩৩ হাজার, ছাগল ১২ হাজার ও ২ হাজার ভেড়া লালন-পালন করা হয়েছে। এবছর লালন-পালনকৃত পশুর স্বাস্থ্য অন্যান্য বারের তুলনায় বেশ ভালো। চাহিদার তুলনায় বেশি পশু মজুদের কারণে মালিক ও ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. ফারহাত আহমেদ জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হাটে সার্বক্ষণিক সাদা পোশাকে পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। হাটে জাল টাকা ননিয়ন্ত্রণে মেশিন বসানো হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এটাতে পুলিশ সর্বদা সজাগ রয়েছে।
এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন