এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের ১ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে নমিনি প্রেরণের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিজি অফিসে পাঠিয়েছেন মর্মে জানা গেছে। কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডির মেয়াদ আগামী ২১ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই এই অবৈধ নিয়োগ বাস্তবায়ন করতে চায় কলেজের বর্তমান সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
নতুন গভর্নিং বর্ডি নির্বাচিত হলে পছন্দের প্রার্থীদ্বয়কে নিয়োগ দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে চাচ্ছে। অপরদিকে কলেজের গভর্নিং বডির তফসিল ইতিমধ্যে ঘোষণা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করার কথা। নির্বাচনের সকল কার্যক্রম কলেজ কর্তৃপক্ষ ও রিটার্নিং অফিসার সম্পন্ন করলেও হঠাৎ করে কলেজ সভাপতি মুঠোফোনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবু সঞ্জিত কুমার দাসকে তা স্থগিত করতে বলেন। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি নির্বাচন বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন, কলেজ সভাপতির কোন এখতিয়ার নেই নির্বাচন বন্ধ ও চালু করার এটা সম্পূর্ণ রিটার্নিং অফিসার করবেন। তারা এ ব্যাপারে আদালতের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন। কলেজের বর্তমান অবস্থায় কোন অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হলে গভর্নিং বডির সদস্যরা তা প্রতিহত করবে বলে জানিয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দুর্নীতি ও অর্থ-বাণিজ্যের তদন্ত না করে এই অবৈধ নিয়োগ প্রদানে সহযোগিতা করে তাহলে গভর্নিং বডির সদস্য ও কলেজের অন্যান্য শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিবে বলে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে অধিকাংশ শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্যরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা যায়, গত ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর কলেজটিতে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০১৬ সালের ১২ মার্চ কলেজ পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, মহাপরিচালকের প্রতিনিধি এবং কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত নিয়োগ কমিটির উপস্থিতিতে গত ১১ জুলাই ২০১৬ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজ সভাপতির পছন্দের দুজন প্রার্থী পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে না পারায় ফল প্রকাশ স্থগিত রাখা হয়। পরবর্তীতে কলেজের গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জোরপূর্বক রেজুলেশন বহিতে স্বাক্ষর করিয়ে অনৈতিকভাবে পরীক্ষাটি বাতিল করে। বিপুল অংকের টাকা আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে এ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে বলে অধিকাংশ শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্যরা মনে করেন। কলেজের সভাপতি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের যোজ-সাজসে গত ৬ জুলাই পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আবেদন পত্র বাছাই, সাক্ষাৎকার বোর্ড গঠন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভা আহŸান করে। সভায় অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও অর্থ-বাণিজ্যের পূর্বাভাস পেয়ে পরিচালনা পরিষদের দুইজন সদস্য মো. মাহবুবুল আলম ও রুনা লায়লা নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পত্র জমা দেন। পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই কলেজ সভাপতি অধ্যক্ষ প্রার্থী মো. শওকত আকবর ও উপাধ্যক্ষ প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কলেজ গভর্নিং বডিকে রেজুলেশন বইতে স্বাক্ষরের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ কাজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে সহযোগিতা করেন অধ্যক্ষ প্রার্থী শওকত আকবর নিজেই। অনিয়ম করে পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার পায়তারার নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবু সঞ্জীত কুমার দাস জানান, পূর্বের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। কি কারণে প্রকাশ করা হয়নি তার সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার আয়োজন হচ্ছে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।
গভর্নিং বডির সিনিয়র অভিভাবক সদস্য বাবু বিঢু ভূষণ দত্ত জানান, কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি গভর্নিং কমিটিতে আছি। এ ধরনের অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারিতা আমি কখনোই দেখি নি। আমরা অসহায়। এর প্রতিকার চাই। পূর্বে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ বৈধ ও নিয়ম-নীতি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ফলাফল সীলগালা করে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছিল আগত নিয়োগ কমিটির প্রতিনিধিরা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা প্রকাশ করা হয়নি। এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ডিজি মহোদয় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, কলেজটির পক্ষ থেকে নিয়োগের জন্য এক্সপার্ট চাওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি এ ব্যাপারে একাধিকবার ফোনও করেছেন। কলেজ থেকে একজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাও পাঠিয়েছেন।
বিষয়টি জানতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।