‘টোয়েন্টিসিক্স-ইলেভেন’

সারাবিশ্ব
image_155587.26-11নাইন-ইলেভেন: নিউ ইয়র্ক; থ্রি-ইলেভেন: মাদ্রিদ; সেভেন-সেভেন: লন্ডন। বিশ্বের অভিশপ্ত সন্ত্রাসী আক্রমণগুলির তালিকায় ২০০৮ সালে যোগ হয় মুম্বই। সে আক্রমণে প্রাণ হারান অন্তত ১৬৪ জন মানুষ, সেই সঙ্গে ন’জন আততায়ী।
পাকিস্তানে নিষিদ্ধকৃত লস্কর-ই-তৈয়বা গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দশ জন তরুণ ‘ফেদাইন’ সমুদ্রপথে এসে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী বলে পরিচিত মুম্বই শহরে চার দিন ধরে তাণ্ডব চালায়। সব মিলিয়ে ১২টি গুলিচালনা এবং বোমাবাজির ঘটনা। নিহতদের মধ্যে ২৮ জন বিদেশি, যারা মোট দশটি বিভিন্ন দেশের নাগরিক।
আক্রমণ চলে দক্ষিণ মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে; ওবেরয় ট্রাইডেন্ট হোটেলে; তাজ মহল প্যালেস অ্যান্ড টাওয়ার হোটেলে; বিদেশি পর্যটকদের প্রিয় লিওপোল্ড কাফে-তে; মহিলা এবং শিশুদের চিকিৎসাকেন্দ্র কামা হাসপাতালে; নরিমান হাউস ইহুদি সমাজকেন্দ্রে; মেট্রো সিনেমায়; টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভবন এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পিছনের একটি গলিতে। মুম্বইয়ের মাজাগাঁও বন্দর এলাকায় একটি বিস্ফোরণ ঘটে, এছাড়া ভিলে পার্লে এলাকার একটি ট্যাক্সিতে।
২৮শে নভেম্বর সকালের মধ্যে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী এক তাজ মহল হোটেল ছাড়া বাকি সব ক’টি অকুস্থল নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ২৯শে নভেম্বর ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডস-এর সদস্যরা তাজ হোটেলকেও মুক্ত করে: বাদবাকি আততায়ীরা সকলেই নিহত হয়। আদত আততায়ীদের মধ্যে একমাত্র যাকে জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়, সে ছিল আজমল কাসব, পাকিস্তানি নাগরিক। কাসবকে তার বিচারের পর ২০১২ সালে ফাঁসি দেওয়া হয়।
মুম্বই আক্রমণের প্রস্তুতি পর্বের নানা খুঁটিনাটি জানা গেছে কাসবের জেরা থেকে। জেরায় কাসব স্বীকার করে যে, আক্রমণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে পাকিস্তানের সরকারি আইএসআই গুপ্তচর বিভাগের সংযোগ ছিল। পরে মার্কিন নাগরিক ডেভিড হেডলির বয়ানেও এই তথ্যের সমর্থন পাওয়া যায়। মুম্বই আক্রমণের ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলেছে বহু দেশে, আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে ব্যক্তিবর্গকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভারতে, পাকিস্তানে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ভারত ও পাকিস্তান, উভয়পক্ষ থেকেই তদন্তে অসহযোগিতা কিংবা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। তবে পাকিস্তানি তরফে কোনো ‘সরকারি সংস্থার’ আক্রমণে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ স্বীকার করা হয়নি।
মুম্বই সন্ত্রাসের ফলে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক সাময়িকভাবে তার নিম্নতম পর্যায়ে পৌঁছায়। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এমনকি ঘোষণা করেন যে, ভারত পাকিস্তানে অবস্থিত বিভিন্ন ‘সন্ত্রাস শিবিরের’ উপর হামলা চালানোর কথা বিবেচনা করতে পারে। আক্রমণের তদন্তে পাকিস্তান সহযোগিতা করছে না, এই অজুহাতে ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করতে পারে – এই যুক্তি দেখিয়ে পাকিস্তান সীমান্তে আরো সৈন্য পাঠায় – এবং পরে প্রত্যাহার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *