সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সহজ শর্তে ৫১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণসহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, টাকার অংকে যার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা (১ ডলার সমান ৮০ টাকা)। শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে পরিশোধ করা যাবে এ ঋণ।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এ-সংক্রান্ত একটি ঋণ চুক্তি সই করেছে বিশ্বব্যাংক। ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম ও বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রতিমন্ত্রী জাহেদ মালেক ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘হেলথ সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের স্বাস্থ্য খাত শক্তিশালী হবে, বিশেষ করে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পরিধি ও গুণগত মান আরো বাড়বে।
এরই মধ্যে ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়র ডলার বা ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার কর্মসূচি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, প্রজননসেবা, পুষ্টিসেবাসহ স্বাস্থ্য খাতের এ কর্মসূচি ১৯৯৮ সালে শুরু হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের মোট সাতটি প্রতিষ্ঠান আগামী পাঁচ বছরে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে কাজ করছে সরকার। বিশেষ করে এ খাতে প্রতিটি প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশনা দেয়া আছে। এর পরও ন্যূনতম অভিযোগ পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, হেলথ সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির ক্ষেত্রে বেশকিছু সংস্কার করা হবে। সেই সঙ্গে মানসম্মত জরুরি স্বাস্থ্যসেবাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। বিশেষ করে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের যেসব এলাকার মানুষ জাতীয় গড়ের তুলনায় কম স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে, সেসব এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া হবে। এ দুই বিভাগে বছরে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার মাকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর মাধ্যমে নির্ধারিত টিকাগুলো নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০ লাখ শিশুকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।
চিমিয়াও ফান বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এতে বাংলাদেশ মাত্যৃ ও শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বিনিয়োগ যেকোনো দেশের জন্য সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের সরকারি ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত হেলথ সেক্টর সাপোর্ট প্রোগ্রামের আওতায় ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা) সহায়তা করবে। এর সঙ্গে ১৫ মিলিয়ন ডলার রয়েছে গ্লোবাল ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটির অনুদান। এ কর্মসূচির মাধ্যমে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রোধ, নবজাতক ও গর্ভকালীন প্রসূতিসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। গত ২৯ জুলাই ‘হেলথ সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট’ ও ডিজিটাইজিং ইম্প্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রজেক্ট শীর্ষক দুটি প্রকল্পে ৫৭ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে বিশ্বব্যাংকের কেন্দ্রীয় বোর্ড। অনুমোদনের এক মাসের মধ্যেই প্রথম প্রকল্পের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করল বিশ্বব্যাংক।