পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় সদস্য পদ হারানোর পর এখন কারাগারে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে তিনি ধানমণ্ডি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করলে পুলিশ তাঁকে আদালতে হাজির করে। গতকাল আদালতে তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। জামিনের আবেদনও করা হয়নি। আত্মসমর্পণের পর লতিফ সিদ্দিকীকে কারাগারে পাঠানোর মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে গত দুই দিন চলা সব নাটকের অবসান হলো; যদিও কারাগারে ঢোকার সময়ও নাটক করেছেন তিনি। কারাগারের পকেট গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। দীর্ঘক্ষণ গোঁ ধরে থাকার পর মূল গেট খুলে তাঁকে ঢোকানো হয়। আর কারাগারে গিয়ে তাঁর ঠাঁই হয়েছে বনখেকো হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধান বন কর্মকর্তা ওসমান গনির পাশের কক্ষে।
এর আগে লতিফ সিদ্দিকীকে যতক্ষণ আদালত এলাকায় রাখা হয় ততক্ষণ আইনজীবী, সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। অনেক আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির দাবিতে মিছিল করে। একপর্যায়ে মিছিলকারীরা জুতা ও ঝাড়ু হাতে নেয়। লতিফ সিদ্দিকীকে প্রিজন ভ্যানে করে আনা-নেওয়া করার সময় ভ্যানের ওপর জুতা ও ঝাড়ু নিক্ষেপ করে মিছিলকারীরা। তারা লতিফ সিদ্দিকীকে ‘নাস্তিক’ ও ‘মুরতাদ’ অভিহিত করে স্লোগান দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া পর্যন্ত মিছিলকারীরা সঙ্গে যায়।
কারা সূত্র জানায়, রক্ষীরা পকেট গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার জন্য লতিফকে অনুরোধ জানাতে থাকেন। কিন্তু তিনি রাজি না হয়ে ‘না’ সূচক মাথা দোলাতে থাকেন। আর এভাবেই কেটে যায় ১৭ মিনিট। অবশেষে প্রধান গেট খুলেই লতিফ সিদ্দিকীকে নেওয়া হয় ভেতরে।
প্রধান ফটক খুলে ভেতরে নেওয়া নিয়মের লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসামিদের ছোট গেট দিয়েই আনা-নেওয়া করা হয়ে থাকে। ছোট গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মাথা নিচু করে ঢুকতে হয়। এটা এমন একটা প্রতীকী ব্যাপার যে, তিনি আইনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কারাগারের ভেতরে ঢুকলেন।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারাগারের জেলর থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তার আসা-যাওয়ার সময় প্রধান গেট খুলে দেওয়া হয়। হাই-অফিশিয়ালদের ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা।’
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জেলর কারাগারে ঢোকার সময় লতিফ সিদ্দিকীও তাঁর সঙ্গে প্রধান গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেছেন।’
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার দায়ের করা একটি নালিশি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাবলে গতকাল আদালতে নেওয়া হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। একটি গাড়িতে করে তাঁকে আদালত প্রাঙ্গণে নেওয়ার পর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে আসামির কাঠগড়ায় হাজির করার পর দুপুর আড়াইটার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট এজলাসে ওঠেন।
মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় এবং তাঁর পক্ষে জামিনের আবেদন না করায় ম্যাজিস্ট্রেট লতিফ সিদ্দিকীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কোনো আইনজীবী নিয়োগ করেছেন কি?’ জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘না।’ পরে মামলার বাদী আবেদ রাজা শুনানি করতে চান। ওই সময় বিচারক বলেন, ‘যেহেতু কোনো জামিনের আবেদন নেই, সেহেতু আসামিকে হাজতি পরোয়ানাবলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।’ আদেশের সঙ্গে সঙ্গে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি নিজে কিছু বলতে চাই।’ বিচারক কোনো বক্তব্য না শুনে আদেশ দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যান।
ম্যাজিস্ট্রেট এজলাস থেকে নামার আগে বাদী বলেন, ‘বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানের পক্ষে আমি ঘৃণায় তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেছি। কারাগারে আটক রেখে বিচার শেষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি আমি।’
লতিফ সিদ্দিকীকে কারাগারে নেওয়ার পর তাঁকে ঢাকায় দায়ের করা আরো দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আদালত সূত্রে জানা যায়, যেসব মামলায় পরোয়ানা জারি রয়েছে, পর্যায়ক্রমে সব মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
হজ নিয়ে ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে প্রায় দুই মাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করে হঠাৎ গত রবিবার রাতে ঢাকায় আসেন বহিষ্কৃত এই আওয়ামী লীগ নেতা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার পর নির্বিঘ্নে সেখান থেকে সরে পড়েন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলেও তাঁকে গ্রেপ্তার না করায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। তাঁর গ্রেপ্তারের ব্যাপারে নীরব থাকায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তাঁর অবস্থানও গত দুই দিনে পরিষ্কার করেনি কোনো সংস্থা। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, লতিফ সিদ্দিকী তাদের নজরদারিতে রয়েছেন। কিন্তু তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পুলিশ দেয়নি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুখ খুলতে চাননি। সরকারি মহল থেকে তাঁর গ্রেপ্তারে আইনি জটিলতার কথা বলা হয়। আবার স্পিকার সাংবাদিকদের জানান, কোনো আইনি জটিলতা নেই। গত সোমবার তাঁর হাইকোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চাওয়ার গুঞ্জন ওঠে। কিন্তু তিনি হাইকোর্টে যাননি।
হেলমেট পরানো যায়নি : গাড়িতে করে আদালত এলাকায় নেওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে মাথায় হেলমেট পরতে বলেন। তাঁকে বলা হয়, নিরাপত্তার জন্য হেলমেট পরতে হয়। লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি মরে গেলেও হেলমেট মাথায় দেব না।’ তখন পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে নিরাপত্তার বিষয়টি বোঝাতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘যতই বোঝান না কেন, হেলমেট মাথায় নেব না।’ একপর্যায়ে তিনি পুলিশকে বলেন, ‘আপনাদের নিরাপত্তা নিয়ে আপনারা ভাবেন।’
থানায় আত্মসমর্পণ : গতকাল আত্মসমর্পণের সময় লতিফ সরাসরি থানার ভেতরে প্রবেশ করেন। পুলিশের এক পক্ষ বলছে, তিনি থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষ হয়ে চলে যান ওসির কক্ষে। আবার আরেক পক্ষ বলছে, তিনি তাঁর গাড়ি থেকে নেমে ওসির গাড়িতে উঠে আদালতে চলে যান। থানার ভেতরেই প্রবেশ করেননি তিনি।
ধানমণ্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে লতিফ সিদ্দিকী থানায় এসে ওসির কক্ষে ঢোকেন। এ সময় তিনি আত্মসমর্পণ করবেন বলে ওসিকে জানান। কিন্তু ধানমণ্ডি থানায় যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, তাই তাঁকে গ্রেপ্তারও করা যাচ্ছে না। এ কারণে ওসি তাঁর গাড়িতে করে তাৎক্ষণিক লতিফ সিদ্দিকীকে আদালতে নিয়ে যান।’ এক প্রশ্নের জবাবে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী থানায় আসছেন আগে থেকে এ ধরনের খবর পেয়েছি কয়েকজন সাংবাদিকের কাছ থেকে।’ এর আগে পুলিশ কিছুই জানত না বলে তিনি দাবি করেন।
ধানমণ্ডি থানার ডিউটি অফিসার এসআই ইফতেখার আহমেদ জানান, দুপুরে হঠাৎ করে লতিফ সিদ্দিকী উপস্থিত হয়ে তাঁর কাছে জানতে চান ওসির কক্ষ কোনটি। তখন ডিউটি অফিসার সাবেক এ মন্ত্রীকে চিনতে পেরে পেছনের দিকে ডান পাশের কক্ষটি ওসির বলে জানিয়ে দেন। তখন লতিফ সিদ্দিকী একাই ওসির কক্ষে ঢুকে পড়েন। এর কয়েক মিনিট পর ওসিসহ লতিফ সিদ্দিকীকে বের হতে দেখেছেন বলে জানান ইফতেখার আহমেদ।
তবে থানায় কর্তব্যরত এক এসআই জানান, লতিফ সিদ্দিকী থানায় আসবেন- এটা প্রকাশ্যে বলা না হলেও সকাল থেকে থানা ভবনে কর্তব্যরত সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। তা ছাড়া লতিফ সিদ্দিকী আসার আগে ওসির কক্ষে পুলিশের রমনা বিভাগের একজন উপকমিশনারও উপস্থিত ছিলেন। ওই এসআই কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিনি আগে থেকেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থানায় আসেন বলে আমার কাছে তথ্য আছে।’
ধানমণ্ডি থানার মূল গেটের সামনে দায়িত্বরত এক কনস্টেবল বলেন, ‘কালো রঙের একটি প্রাডো গাড়ি থানার সামনে এসে দাঁড়ায়। এ সময় আমি মনে করেছিলাম বড় ধরনের কোনো ভিআইপি এসেছেন। গাড়ি থামার এক মিনিটের মাথায় বিশাল দেহের অধিকারী এক ব্যক্তি নেমে পড়লেন। তাঁকে দেখে আমি স্যালুট দিলাম। ওই সময় বুঝতে পারলাম, তিনি আমাদের সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী।’ ওই কনস্টেবল আরো বলেন, ‘আগে থেকেই ওসি স্যারের গাড়ি রেডি করা ছিল। তাঁর প্রাডো গাড়ির ভেতর আরো দুজন লোক বসা ছিলেন। লতিফ সিদ্দিকী পুলিশের গাড়িতে ওঠার পরপরই প্রাডো গাড়িটি চলে যায়। তাঁকে ওসি স্যারের রুমে যেতে দেখিনি।’
আত্মসমর্পণের আগে পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন : বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা যায়, ধানমণ্ডি থানায় হাজির হওয়ার কয়েক মিনিট আগে লতিফ সিদ্দিকী ফোন দেন পুলিশের একজন উধ্বর্তন কর্মকর্তাকে। তিনি ওই কর্মকর্তাকে বলেন, ‘শুনলাম, আমাকে গ্রেপ্তারে নাকি এখন বাধা নেই।’ অপর প্রান্ত থেকে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন নয়, আগেও বাধা ছিল না।’ লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি তো ধানমণ্ডিতে। আমি থানায় আসতে চাই।’ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার, আপনি কোথায় আমাকে জানালে আমি ফোর্স পাঠিয়ে নিয়ে আসব। আপনার নিরাপত্তা দরকার।’ লতিফ বলেন, ‘ফোর্স পাঠানোর দরকার নেই। আমি দুই মিনিটের মধ্যে ধানমণ্ডি থানায় যাচ্ছি। আশপাশেই আছি।’
দুদিন ছিলেন ধানমণ্ডিতেই : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকায় আসার পর লতিফ সিদ্দিকী ধানমণ্ডিতে চলে যান। ওই দিন রাতে কিছুক্ষণ তাঁর ভাড়া বাসায় থাকেন। পরে রাতেই তিনি এক আত্মীয়ের বাসায় চলে যান। তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত আমরা পর্যবেক্ষণ করি।’
মাথা নোয়াবার নয় : কারা সূত্র জানায়, ছোট গেট দিয়ে ঢোকার জন্য পীড়াপীড়ির মুখে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি এখনো এমপি। গত ৩০ বছরে আমি পকেট গেট দিয়ে ইন বা আউট হইনি।’ অবশেষে তাঁর জন্য নিয়ম ভেঙে প্রধান গেট খুলে দেওয়া হয়।
কারা কর্মকর্তারা জানান, কোনো অসুস্থ বন্দিকে যদি অ্যাম্বুলেন্সে করে আনা হয়, যদি তিনি একেবারেই হাঁটতে অক্ষম হন, সে ক্ষেত্রে প্রধান গেট খুলে আসামিকে ঢোকানো ও বের করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ডিআইজি প্রিজন শামসুল হায়দার ছিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোন গেট দিয়ে বন্দিকে ঢোকানো হবে তার লিখিত কোনো নিয়ম নেই। তবে প্রথা হিসেবে ছোট গেট দিয়েই সব আসামিকে ঢোকানো হয়ে থাকে।’
এর আগে অন্য কেউ কারা ফটকে এমন নাটক করেছেন কি না সে বিষয়ে সাবেক ও বর্তমান কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সুনির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। এক কারা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাঘা বাঘা নেতাদের কারাগারে ঢোকানো হয়। ওই সময় তাঁদের কেউ এমন গোঁ ধরেননি।
কারা সূত্র জানায়, ফটকের বাইরে হম্বিতম্বি করলেও ভেতরে গিয়ে সব নিয়ম মেনে কারাগারের ২৬ সেলে যান লতিফ সিদ্দিকী। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো স্বজন তাঁকে দেখতে যাননি। জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলর নেছার আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা) কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করার আবেদন করেননি।
যেভাবে রাখা হয়েছে : ভেতরে বেশ শান্তই রয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। অনুষঙ্গিক কাজ শেষে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটক থেকে বেশ দূরে ২৬ নম্বর সেলে। সেই সেলের ছোট একটি কক্ষে রাখা হয়েছে তাঁকে। তিনি সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি হিসেবে ডিভিশন পাচ্ছেন। সে হিসেবে তিনি পাচ্ছেন একটি খাট, মশারি, চেয়ার, টেবিল ও দুটো কম্বল। পাচ্ছেন উন্নতমানের খাবার। কারা সূত্র জানায়, লতিফ সিদ্দিকীর পাশের কক্ষেই আছেন বনখেকো নামে পরিচিত সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গনি। ওয়ান ইলেভেনের পর ওই সময় গঠিত টাস্কফোর্স কর্মকর্তারা উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। ওই সময় তাঁর উত্তরার বাসায় কাঁথা-বালিশের ভেতর থেকে এক কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। লতিফ সিদ্দিকীর অন্য পাশের কক্ষে আছেন হত্যা মামলার আসামি আজম রেজা। কারা সূত্র জানায়, ২৬ সেলটির বারান্দায় তাঁদের দেখা হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
যত মামলা : ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ঢাকায় সাতটি, চট্টগ্রামে তিনটি, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, সিলেট ও চাঁদপুরে দুটি করে এবং গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, বরগুনা, কুমিল্লা, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, মাগুরা, টাঙ্গাইল, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও হবিগঞ্জে একটি করে মামলা হয়। এ পর্যন্ত ৩২টি মামলার খবর জানা গেছে। এসবের মধ্যে এক ডজনেরও বেশি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বাকিগুলোতে তাঁকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে। এসব মামলা করা হয়েছে দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারায়। কোনো কোনো মামলা শুধু দণ্ডবিধির ২৯৮ ধারার অপরাধ আমলে নেওয়া হয়েছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীর যতটা বিরোধী, তার চেয়ে বেশি হজ আর তাবলিগের বিরোধী।’ এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রমশক্তির অপচয় হয়। – কালেরকন্ঠ