ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পের অভ্যন্তরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাউয়ুম মিয়া। পেশায় রড মিস্ত্রি হলেও এখন বর্ষার পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তায় চালাচ্ছেন নৌকা। রাস্তাঘাট হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে থাকায় তিনি এখন পশ্চিম সানারপাড়, মধ্য সানারপাড় ও লন্ডন মার্কেট এলাকায় নৌকা চালান।
শুধু কাউয়ুম মিয়াই নন, তার মতো আরো অনেকেই এখন সানারপাড় এলাকার প্রধান রাস্তায় নৌকা চালিয়ে সংসার টানছেন। পুরো এলাকা পানির নিচে থাকায় সেখানে অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ নেই তাদের।
দুই থেকে আড়াই মাস ধরে পানিতে ডুবে আছে ডিএনডির ডেমরার পশ্চিম সানারপাড়, কোদালদোয়া, পূর্ব টেংরা, গ্রিন সিটি আবাসিক এলাকা, ডগাইর পূর্বপাড়া, বাহির টেংরা, মধ্য টেংরা, সারুলিয়া, বামৈল, সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়, লন্ডন মার্কেট, আলেক মার্কেট, নিমাইকাশারী, বাঘমারাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা।
ডিএনডির পাম্প হাউজের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন, ডিএনডির প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। এ হিসাবে পানিবন্দি অবস্থায় আছে প্রায় ১২ লাখ মানুষ। ডিএনডির অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকা এক থেকে চার ফুট পানিতে তলিয়ে আছে।
সানারপাড়ের লন্ডন মার্কেট এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন জানান, পুরো সানারপাড় এলাকায় এখন ঘরে ঘরে পানি। রাস্তায় চলছে নৌকা। সানারপাড়ের ক্যানেল রোডের কোনো কোনো স্থান কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে। তাদের ঘরও হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে আছে। আর রাস্তায় কোমর সমান পানি।
পশ্চিম সানারপাড় এলাকার বাসিন্দা আফিজ উদ্দিন জানান, আমরা জানতে পেরেছি পাম্প হাউজের বড় চারটি পাম্পের মধ্যে দুটি চলছে না। এতেও পানি আরো বেড়ে গেছে।
ডিএনডির পানি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের পাউবোর পাম্প হাউজের ৫১২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি পাম্প দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হয়। কিন্তু চারটি পাম্পের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে ২৫৬ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাম্প। এতে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে ধীরগতিতে।
পাউবোর ঢাকা যান্ত্রিক (পাম্প হাউজ) বিভাগের (শিমরাইল পাম্প হাউজ) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব ব্যাপক জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে জানান, পাম্প হাউজের ২ নম্বর পাম্পটি ১৫ আগস্ট ও ৪ নম্বর পাম্পটি এক সপ্তাহ আগে বিকল হয়ে পড়ছে। ২ নম্বর পাম্পটির ইম্প্রেলার ভেঙে যাওয়ায় ছয় মাসের আগে সচল করা সম্ভব নয়। ৪ নম্বর পাম্পটি লিক করায় পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন মেরামতকাজ চলছে। আশা করা যায়, দু-একদিনের মধ্যে পাম্পটি চালানো সম্ভব হবে। এছাড়া ঈদুল আজহার আগে ডিএনডি থেকে পানি দূর করতে ১০৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি পাম্প বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরো জানান, প্রধান নিষ্কাশন খালে পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনা ভেসে আসার কারণে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে পারছি না। কোনো কোনো দিন পাম্প হাউজের মুখ থেকে দুই ট্রাক পরিমাণ পলিথিনসহ ময়লা-আবর্জনা তুলে ফেলতে হচ্ছে। এতে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে ডিএনডি প্রকল্পের অভ্যন্তরের জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের পাম্প হাউজের সামনে গতকাল মানববন্ধন করেছে স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসী। জুমার নামাজের পর তারা নারায়ণগঞ্জ-শিমরাইল-ডেমরা সড়কে এ মানববন্ধন পালন করে।
১৯৬৬-৬৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানা ও রাজধানী ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, এলাকার ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে ডিএনডি প্রজেক্টটি নির্মিত হয়। বর্তমানে ডিএনডিতে প্রায় ২০ লাখ লোক বসবাস করছে।