নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহন বন্ধ রেখেছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো। যাত্রীবাহী ফ্লাইটেও আরোপ করেছে কড়াকড়ি। দীর্ঘদিনের চেষ্টায়ও চালু করা সম্ভব হয়নি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিউইয়র্ক রুটের ফ্লাইট। আকাশপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে পশ্চিমা দেশগুলোর এমন কড়াকড়ির মধ্যেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্তৃত হচ্ছে দেশের এভিয়েশন খাত।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের এয়ার সার্ভিস চুক্তি (এএসএ) হালনাগাদ করা হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালাতে আগ্রহ দেখিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, মালদ্বীপ, কানাডা ও অস্ট্রিয়াও। শিগগিরই এসব দেশের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর মধ্যে আগামী মাসেই ব্রুনাইয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার ব্রুনাইয়ের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপন হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারেরও যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
এদিকে ফ্লাইট কার্যক্রম চলমান থাকলেও চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন করে আরো ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশগুলোর সঙ্গে এয়ার সার্ভিস চুক্তি হালনাগাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বেবিচক।
এ প্রসঙ্গে বেবিচকের সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর এ মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালানোর বিষয়ে অনেক দেশই আগ্রহ দেখাচ্ছে। এছাড়া কিছু দেশের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট নবায়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নতুন করে পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়ায়। কিন্তু সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় ঢাকা থেকে ইন্দোনেশিয়া যেতে যাত্রীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এয়ার এশিয়া ও মালিন্দো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি পরিবহন হচ্ছে বেশকিছু পণ্য। এ অবস্থায় ইন্দোনেশিয়া ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চলাচলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা যাচাই করেছে এবং রুটটিকে সম্ভাবনাময় মনে করছে। কার্গো ও যাত্রী পরিবহন উভয়ক্ষেত্রেই রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা।
দীর্ঘদিন কার্যক্রমে থাকার পর নতুন করে আরো ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন। এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন গভীর হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশী শ্রমিকেরও চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বার্থেই কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর বিষয়ে চুক্তি করতে আগামী মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের কথা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বেবিচক প্রতিনিধি দলের।
এর আগে গত ২৭ জুলাই যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের পরিসর বাড়াতে ঢাকার সঙ্গে এয়ার সার্ভিস চুক্তি হালনাগাদ করেছে মস্কো। হালনাগাদ চুক্তিতে দুই দেশের সাপ্তাহিক ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি তিনটি থেকে বাড়িয়ে ১৪টি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেবিচকের অনুমোদিত বৈমানিক লাইসেন্স, এয়ারওয়ার্দিনেস ইন্সপেক্টর, কেবিন ক্রুসহ আনুষঙ্গিক সব সনদকেও স্বীকৃতি দেবে এবং গ্রহণ করবে রাশিয়া। এতে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবে।
প্রসঙ্গত, অপ্রতুল নিরাপত্তা ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের কারণ দেখিয়ে গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি কার্গো (বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পণ্য পরিবহন) পরিবহন স্থগিত করে যুক্তরাজ্য। পরে ওই বছরের ২১ মার্চ পরামর্শ, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও জনবলের প্রশিক্ষণের জন্য দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেডলাইন অ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে বেবিচক।
বেবিচকের তথ্যমতে, রেডলাইনের পরামর্শে নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বেশকিছু যন্ত্র কেনা হয়েছে। এসব যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে— উড়োজাহাজের হোল্ডে রাখার মতো ভারী ব্যাগ তল্লাশিতে আটটি ডুয়াল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন, হ্যান্ড ব্যাগ তল্লাশির জন্য ১৪টি ডুয়াল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন, ছয়টি লিকুইড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস), নয়টি আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানিং
সিস্টেম (ইউভিএসএস), চারটি ফ্যাপ বেরিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার, পাঁচটি বেরিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার, দুটি এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) ও চারটি এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি)। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেবিচকের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এসব যন্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহন বন্ধ থাকায় গত অর্থবছরে এ খাত থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিমানের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এয়ারলাইনসটি উড়োজাহাজের কার্গো হোল্ডের মাধ্যমে ৪০ হাজার ৯১১ টন মালামাল পরিবহন করেছে। এর মাধ্যমে বিমানের আয় হয় ৩১৫ কোটি টাকা, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৩৯২ কোটি টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্গো সেবার পরিধি বাড়াতে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ ও এমিরেটস এয়ারলাইনসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বিমান। এজন্য গত বছর ইতিহাদ ও এমিরেটসের সঙ্গে ইন্টারলাইন এগ্রিমেন্ট করে বিমান। এর আওতায় বিমানের গ্রাহকদের মালামাল ১৩টি রুটে পৌঁছে দিচ্ছে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। আর ইউরোপের ১৫টি রুটে বিমানের হয়ে পণ্য পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে এমিরেটস এয়ারলাইনস।