পানির নিচে ডুবে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসল। সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ায় এই অঞ্চলে হাট-বাজারগুলোতে কাঁচা তরকারির সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে করে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছেছে।সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ভাগ্যকুল, লৌহজং, টঙ্গীবাড়ি ও জেলা সদরের চরাঞ্চলসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। নিমজ্জিত হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় তলিয়ে গেছে কাঁচা-পাকা সড়ক ও ব্রিজ। কোথাও কোথাও আবার নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দেওয়ায় মানুষ আতংকের মধ্যে রাতদিন পার করছে। এ অবস্থায় ওই এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে কতৃপক্ষ।
বানের পানিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পদ্মা চরের মানুষগুলো। লৌহজং উপজেলার পদ্মা চরের কুমারভোগ ইউনিয়নের তেউটিয়া ও খড়িয়া গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঘরের সাথে নৌকা বাধা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে নৌকাই এক মাত্র ভরসা। ঘরের উঠানে পানি থৈই থৈই করছে, কষ্টে জীবন যাপন করছে এসব এলাকার মানুষ। লৌহজংয়ে বানের পানিতে পদ্মাচরের গৃহস্থরা বিপাকে পড়েছেন গবাদি পশু নিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, পদ্মা নদীতে প্রতিদিন সকাল বিকাল হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দী মানুষ জন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোত আরও দু’দিন অব্যাহত থাকলে আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ অশ্রয়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
বানের পানিতে আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। সেই সাথে তলিয়ে গেছে আবাদ করা সবজি। গবাদিপশু বিশেষ করে গরু ছাগল হাঁস মুরগী নিয়ে বিপদে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।
এদিকে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে যেতে চান না অনেক পানিবন্দী মানুষ। তার কারণ হিসেবে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পদ্মা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ডাকাতির ভয়ে বানবাসি মানুষেরা সেখানে যেতে চাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বানবাসি শাহানা বেগম জানান, কয়েক বছর আগে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশ্রয় কেন্দ্রে ডাকাতরা গরু ছাগল এবং টাকা পয়সা লুট করে নেয়। এই অবস্থায় যাতে জলদস্যুরা আক্রমণ করতে না পারে তাই অনেক পুরুষদের নৌকা নিয়ে রাতে পাহারায় থাকতে হয়। তিনি ৫টি গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তার মত অনেক গৃহস্থরা গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানান।
মুন্সীগঞ্জ ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ফজলে আজিম জানান, পানি কমতে শুরু করেছে, বানবাসি মানুষরা তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে না যাওয়ার কারণ হল তাদের আশঙ্কা বাড়ি ঘরে লুট পাট ও চুরি ডাকাতি হতে পারে। এসব কারণে ইতিমধ্যে এই এলাকার জন্য পুলিশ এবং চকিদার, দফেদার নিয়োগ করা হয়েছে।
এদিকে সর্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। তিনি লৌহজং উপজেলার পানিবন্দী মানুষের সাথে কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন এলাকা পরির্দশন করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে ত্রাণ বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,গত এক সপ্তাহে পদ্মার পানি বেড়ে লৌহজং উপজেলার ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিশেষ করে চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে প্রায় শতভাগ। এখানে কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও বুক সমান পানি। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া গ্রামগুলো হচ্ছে লৌজংয়ের কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া, রানীগাঁও, কোরহাটি, লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের কোরহাটি, ঝাউটিয়া, তেউটিয়া, পাইকারা, সাইনহাটি, ব্রাহ্মণগাঁও, কনকসার ইউনিয়নের সিংহেরহাটি, বেজগাঁও ইউনিয়নের বেজগাঁও চর, ছত্রিশ, সুন্দিসার চর, গাঁওদিয়া ইউনিয়নের গাঁওদিয়া, শামুরবাড়ি, হাড়িদিয়া, রানাদিয়া, পাখিদিয়া, কলমা-ধাইদা ইউনিয়নের ডহরী, পূর্ব ভরাকর, পশ্চিম ভরাকর, কলমা বিধুয়াইল চর।