“হোয়াইটওয়াশ বা বাংলাওয়াশ নয়। ভাবনাজুড়ে থাকা উচিত নিজের কথা, নিজেদের কথা। উচিত ১৬ কোটি মানুষের চোখের তারা হয়ে মাঠে নিজ দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। আর মানষপট জুড়ে রাখা আগামী বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে শুরু হতে যাওয়া ভিন্ন কন্ডিশনে বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার বিষয়। বিশ্বকাপে খেলা তো আর যা তা কথা নয়! মাত্র ১৫ জনের ভাগ্যে জোটে এমন বিরল সৌভাগ্য।”
বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নটাই এখন সব খেলোয়াড়ের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বাকি দিনগুলোতেও প্রস্তুতি নিতে হবে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের ভিন্ন কন্ডিশন আর আর উইকেটে খেলার কথাটা মাথায় রেখে। এই কথাগুলো টানলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা স্পিনার মোহাম্মদ রফিক।
“বিশ্বকাপে নিজেকে আর নিজের দেশের পতাকায় উৎসবের রঙ লাঙ্গানোর স্বপ্ন ধরে আরো উজ্জীবীত না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই টাইগারদের! নতুন ইতিহাস গড়ার কত সুযোগ! এসব কথা মাথায় রাখলে, ঠিক যেমনটা মাশরাফির দল খেলছে, তেমনটা খেলে চললে এবং আগের ম্যাচগুলোর ভুলগুলাো শুধরে নিতে পারলে জিম্বাবুয়েকে ২ ম্যাচ হাতে রেখেই ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হারিয়ে দেওয়া সম্ভব! এখনই হোয়াইটওয়াশের ভাবনা মাথায় না রেখে নির্ভার হয়ে খেলুক বাংলাদেশ দল। তাহলে সুফল আসতে বাধ্য।”
নিজেদের সেরা শক্তি স্পিনকে ব্যবহার করে ঢাকার উইকেট থেকে তৃতীয় ম্যাচে আগেই জয়ের ভাবনার মাঝে নেই দেশের ইতিহাসে সবোর্চ্চ টেস্ট উইকেট শিকারি রফিক। বলে দিলেন, “ম্যাচ খেলতে নামার আগেই সিরিজ জয়ের ভাবনায় আক্রান্ত হলে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তার চেয়ে বরং দলের মধ্যে যে উজ্জীবনী শক্তি দেখা যাচ্ছে তা মাঠে ঢেলে দিতে পারলে আরো একটি সিরিজ জয় আসতে বাধ্য। আর চট্টগ্রামের উইকেটে খেলে
আসার পর ঢাকার উইকেটও বড় ফ্যাক্টর।”
৩৩ ম্যাচে ১২৫ উইকেট রফিকের। ক্রিকেটের তিন ধারায়ই যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য সেই সময়ের ক্ষুদ্র বাংলাদেশ দলের বড় ত্রাসময় বা হাতি স্পিনার ছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস শুরুর ইতিহাসের অন্যতম জলজ্যান্ত ইতিহাস তো রফিক নিজেই। আর বাংলাদেশের স্পিন দিয়েই যে নিজের মাটিতে প্রতিপক্ষকে বধ করা প্রধান লক্ষ্য রাখা উচিত তাও বিশ্বাস এই ৪৪ বছরের কিংবদন্তির।
রফিকের ভাষায়, “মনে হয় ৫০ বছর হবে। কিংবা তারো আগে থেকে আমাদের দেশের ক্রিকেটে মূল শক্তি স্পিন। আগেও যেমন আমাদের এই বিভাগ নিয়ে অন্য দলগুলো গবেষণা করে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছে। জিম্বাবুয়েও নিশ্চয় ভিডিও দেখে গবেষনা প্রস্তৃতি নিয়ে এসেছে।” তারপরও টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর জিম্বাবুয়ে দাড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজ হারের মুখে। এই সিরিজে তাদের জেদটাও টেনে আনলেন রফিক. “ওদের তো লাভই হচ্ছে। এখানে অনুশীলনটা হচ্ছে। আর আগেও ওদের আমরা হারিয়েছি। তাই এত সহজে তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ছেড়ে দিতে চাইবে না ওরা।”
পা জুড়ে অস্ত্রাপচার। মনজুড়ে কষ্ট ভর করে কিছুদিন পরপর। ক্যারিয়ারের শুরুতেই ইনজুরি। সার্জারি সার্জারিতে ২০০১ এ ক্যারিয়ার শুরু করার পর থেকেই বিপর্যস্ত ইনজুরির কাছে। কিন্তু লড়াইয়ে হার মানেননি ৩১ বছরের মাশরাফি। আর রফিকের এই সাবেক আন্তর্জাতিক ও ক্লাব পার্টনার এখন তো ওয়ানডে অধিনায়ক আবার! কিভাবে সম্ভব একজন মানুষের এভাবে সর্বোচ্চ প্রতিকূল অবস্থায় নিজেকে বারবার সুস্থতা আর ফর্মে ফিরিয়ে আনা? শেষ ২ ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ উইকেট তার! খুব কাছ থেকে দেখেছেন বলেই এক কথায় রফিক বলে দিতে পারেন, “মাশরাফি অন্যরকম ছেলে। ওর মতো ইনজুরিতে যে কেউ প্রথমবার পড়লে ওই সময়েই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেত। আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত। কিন্তু কোনো অবস্থায় মনের জোর হারানোর ছেলে না ম্যাশ। মনের জোর অনেক বেশি বলেই মাশরাফির পক্ষে বারবার ফিরে আসা সম্ভব হয়েছে। ও এমন মানুষ, যে বড় বড় ইনজুরিতে পড়লেও প্রতিবার একই পণ করে। সেই পণ আবার লড়াই করে মাঠে ফিরে নিজেকে প্রমাণ করা। ও করে দেখায়। ওর জায়গায় আর কেউ হলে এমনটা পারত বলে আমি বিশ্বাস করি না।” এর সঙ্গে খেলার জন্য ’নড়াইল এক্সপ্রেসে’র ভালোবাসার কথাটাও জুড়লেন রফিক, “এত ইনজুরির পরও মাশরাফি ক্রিকেট অন্ত প্রাণ। অনেক ধৈর্য ওর। দলে ওর চেয়ে ধৈর্যশীল আর কেউ নেই। মাশরাফি কখনো হাল ছাড়ে না।”
তামিম ইকবাল দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কাটিয়ে ফর্মে ফিরেছেন। তাতে দারুণ খুশি রফিক। ”ওর মতো খেলোয়াড় তো এভাবেই খেলবে। তামিম দিন দিন আরো ভালো খেলবে এটাই স্বাভাবিক। সেই সাথে এনামুলও জ্বলে উঠে ওপেনিংয়ে রেকর্ড গড়েছে। নির্ভার হয়ে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নটা ধরে রেখে এভাবে খেলে চললে আমাদের খেলোয়াড়রা আরো ভালোর দিকেই যাবে।” এক সময় কেরানীগঞ্জের ছেলে রফিক নদী সাতরে খেলতে আসতেন ঢাকা স্টেডিয়ামে। কিংবা রাজধানীতে খেলতে। অসম্ভব পরিশ্রম এবং আরাধনা দিয়ে জীবন গড়া রফিকের। জিম্বাবুয়ে সিরিজ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে উত্তরসূরীদের জন্য একটা পরামর্শ তার। বলা যেতে পারে দাবিও। রফিকের ভাষায়, ১৬ কোটি মানুষ থেকে ১৫ জন খেলে জাতীয় দলে। খেলোয়াড়রা প্রত্যেকে যেন সময়ানুবর্তী, সুশৃঙ্খল থাকে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিজের জত্ন নেওয়া। অন্তত দেশের কথা ভেবে ওরা আরো যত্নবান হোক নিজেদের প্রতি। নিজেকে ভালোবাসুক। চোখ থাকুক বিশ্বকাপে।”