প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি, যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। তিনি বলেন, একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি, সেখানে ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে।
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) করেছেন। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্বতা দরকার। অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার গেজেট প্রকাশের শুনানিতে গতকাল প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ শুনানি শেষে গেজেট প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এর আগে শুনানির শুরুতে গেজেট প্রকাশের জন্য আবারও সময়ের আবেদন জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, গত তারিখে কী কথা ছিল? আলাপ-আলোচনা করার কথা হয়েছিল। কার সঙ্গে কে কে থাকবেন? এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আইনমন্ত্রীর কথা বললে প্রধান বিচারপতি বলেন, সবাই আপিল বিভাগের বিচারপতি। আমরা এতই ইয়ে হয়ে গেলাম যে, আলোচনা পর্যন্ত করলেন না? মিডিয়াতে অনেক কথা বলেন। আদালতে এসে অন্য কথা বলেন। আপনাকে নয়, আপনাদের বলছি। আপনিই বলেন, কবে কী হবে? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সবকিছু মিলিয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। একটি ঝড় উঠেছে। সব নিয়েই আমি বিব্রত। প্রধান বিচারপতি বলেন, ঝড় তো আপনারাই উঠাচ্ছেন। আমরা কি ঝড় ওঠার মতো কোনো মন্তব্য করছি? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, না, আপনারা করেননি। শুনানিতে এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম বলেন, আমার আবেদনটির শুনানি করুন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা, বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি, যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। আজকে একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি, সেখানে ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) করেছেন। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্বতা দরকার। এর আগে ৬ আগস্ট শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে দুই সপ্তাহ সময় দেয় আপিল বিভাগ। ৩০ জুলাই প্রধান বিচারপতি এ নিয়ে সরকার ও আদালতের মধ্যে আলোচনার প্রস্তাব দেন। পরে আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে আগ্রহের কথা জানালেও সেই আলোচনা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দেয়, তাতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা তৈরির নির্দেশনাও ছিল। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী বলে এর আগে এক শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। পরে ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেই সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়কে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়।