বাংলাদেশ, ভারত, নেপালে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এরই মধ্যে এ তিনটি দেশে কমপক্ষে ২১১ জন মানুষ মারা গেছেন বন্যার কারণে। বন্যার পূর্বাভাষে যা বলা হচ্ছে তাতে এ সংখ্যা আরও বাড়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বাংলাদেশে মারা গেছেন কমপক্ষে ৫৮ জন। বন্যা ও ভূমিধসে নেপালে মারা গেছেন ৮০ জন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মারা গেছেন ৭৩ জন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন প্রেস টিভি। এতে বলা হয়, দেশের উত্তরাঞ্চলে সেনা মোতায়েন করেছে বাংলাদেশ। স্থানীয় সরকারের একজন কর্মকর্তা কাজী হাসান আহমেদ বলেছেন, বন্যার পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছেন কমপক্ষে ৭ লাখ মানুষ। কয়েক দিনের বর্ষণে নদীগুলোর তীর উপচে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালের পর দিনাজপুরে এত ভয়াবহ বন্যা আর কখনো দেখি নি। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে শহর রক্ষা বাঁধ। মূল শহরের বেশির ভাগ এলাকা এখন পানির নিচে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সতর্কতা দিয়েছে। বলা হয়েছে, বড় বড় নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে। এতে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, আরো ভয়ানক বন্যার। ভারতের আসামে জরুরিভিত্তিতে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। বিহার রাজ্যের কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। সেখানে সাতটি নদী বিপদসীমায় রয়েছে। ২০০৮ সালে এ রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিল। ওই সময় সীমান্তবর্তী নেপালের নদীগুলোর পানি পাড় উপচে বয়ে আসে বিহারে। এ জন্য দুই দেশ একে অন্যকে দোষারোপ করে। বুধবার পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ের মুখপাত্র অনীল সাক্সেনা বলেছেন, রেললাইনের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে একেবারে ডুবে রয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির একজন ফটোগ্রাফার আকাশ থেকে নেপালের ছবি তুলেছেন। তাতে দেখা যায় সেখানকার বিপুল এলাকা পানির নিচে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল একেবারেই পানিতে তলিয়ে আছে। নেপালের এ অঞ্চলের কমপক্ষে ৪৮ হাজার বাড়িঘর একেবারে তলিয়ে আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা যখন বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার অভিযান চালাচেছন তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, আরো ৩৬ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তারা মারা গেছেন। নেপালের রেড ক্রস সতর্কতা দিয়েছে। বলেছে, নিরাপদ পানীয় পানি ও খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে সেখানে সৃষ্টি হতে পারে এক মানবিক সঙ্কট। এ সংস্থার মুখপাত্র দিব্য রাজ পাউডেল বলেছেন, এতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বহু গ্রাম ও জনবসতিতে পৌঁছাও যাচ্ছে না। সেকানে টেলিযোগাযোগ ও মোবাইল ফোনও কাজ করছে না। ফলে ওইসব অঞ্চলের পরিস্থিতি কি তা জানা সম্ভব হচ্ছে না। সাপ্তারি জেলার একজন স্বেচ্ছাসেবক দীপক কুমার যাদব বলেন, পানির স্তর কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও বহু মানুষ উঁচু স্থানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, পানি সামান্য কমেছে। কিন্তু মানুষজন বাড়িতে ফিরতে পারে নি। তারা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এখন মানুষের জন্য জরুরি প্রয়োজন হলো নিরাপদ পানি ও খাবার। ভারতে হিমাচল প্রদেশে ভূমিধসে দুটি বাস চাপা পড়ায় রোববার কমপক্ষে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরাখন্ডে রোববার প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ভূমিধস হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন