ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সরকার বা বিরোধী দল কারো ফাঁদেই পা দেবেন না বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আপিল বিভাগের এই রায় নিয়ে সংযত আচরণ ও কোনো রাজনীতি না করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে প্রকাশিত আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বক্তব্য আদালতের দৃষ্টিগোচর করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সরকার বা বিরোধী দল- আমরা কারো ট্র্যাপে পড়বো না’। তিনি আরো বলেন, ইতিহাস একদিন বিচার করবে। জাতীয় সংসদের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে বুধবার বিকালে আইন কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই রায়ের কঠোর সমালোচনা করেন ুুএবিএম খায়রুল হক। তিনি বলেন, আমরা এতদিন বলেছি ‘পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’। কিন্তু আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে এখন থেকে ‘জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ বলতে হবে। রায়ে সংসদ সদস্যদের বিষয়ে প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের সমালোচনা করে এই রায় ‘পূর্ব ধারণাপ্রসূত’ উল্লেখ করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি আরো বলেন, যদি আইন ও শাসন বিভাগ ভুল করে তাহলে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের ভয় হয়, সুপ্রিম কোর্ট যদি ভুল করে তাহলে আমরা কোথায় যাব?
গতকাল সকালে আপিল বিভাগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনসহ সিনিয়র আইনজীবীরা গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তুলে ধরেন। জয়নুল আবেদীন বলেন, রায় পূর্বধারণা প্রসূত এবং বাংলাদেশ এখন বিচারকদের প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে- আইন কমিশনের পক্ষ থেকে এমনটি বলা হয়েছে। সর্বোচ্চ বিচারালয়কে নিয়ে যেভাবে বলা হয়েছে, তা আদালত অবমাননার শামিল। আমরা বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য বলছি। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। আপনারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য বলছেন। তবে, রায় ঘোষণার পর গঠনমূলক সমালোচনা করা যায়। রায় হওয়ার পর আমরা গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করি। প্রধান বিচারপতি বলেন, এই বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে হলে কোনো রাজনীতি আনবেন না। আমরা রায় দিয়ে দিয়েছি। বিচার বিভাগ কোনো প্রতিউত্তর দেবে না। এ সময় শ ম রেজাউল করিমসহ কয়েকজন আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের এমন প্রস্তাব আইনজীবী সমিতির না কি ফোরামের- এমন প্রশ্ন তুলে বলেন, আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা আনা হয়নি। জয়নুল আবেদীন বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে বলছি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সচেতন, আমরা দেখছি।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যকে আদালত অবমাননাকর উল্লেখ করে আদালত অবমাননার রুল ইস্যুর কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি অনুরোধ করবো, আপনারা সংযত আচরণ করবেন, যা সবার জন্য মঙ্গল। সরকার বা বিরোধী দল- আমরা কারও ট্র্যাপে পড়বো না। আমরা সচেতন। প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, সাতজন বিচারপতি চিন্তাভাবনা করে রায় দিয়েছি। বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে হবে। রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, আমি অনুরোধ করবো, আপনারা সংযত আচরণ করবেন, যাতে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে। আপনারা আরো সচেতন হবেন। এরপর জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা আমাদের কাজ করছি। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান একটি দায়িত্বশীল পদে আছেন। তিনি এভাবে বলতে পারেন না। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘উই কনসার্ন। সিনিয়র আইনজীবী মওদুদ আহমদ বলেন, ওই বক্তব্য অবমাননাকর। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আদালতকে নিয়ে কুৎসা রটানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা যে-কেউ করতে পারেন। ইতিহাস একদিন বিচার করবে।