বেসরকারি খাতে আরো ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদনক্ষমতা ১ হাজার ৭৬৮ মেগাওয়াট।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও ৭৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। দুটি আলাদা প্রস্তাবে ৫০ হাজার টন চাল ও ৫০ হাজার গম আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন হয়েছে এদিন।
অনুমোদনপ্রাপ্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দুটি নির্মিত হবে ঢাকার কেরানীগঞ্জে। এর একটি স্থাপন করবে এপিআর এনার্জি। হাইস্পিড ডিজেলভিত্তিক (এইচএসডি) ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য হবে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) ১৯ দশমিক ৯৯৩০ টাকা। কেরানীগঞ্জে এইচএসডিভিত্তিক ২০০ মেগাওয়াটক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে এগ্র্রিকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস লিমিটেড। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য হবে ১৯ দশমিক ৬৬৮০ টাকা। এছাড়া বাংলা ট্র্যাক লিমিটেডের যশোরের নওয়াপাড়ায় ১০০ মেগাওয়াট ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ২০০ মেগাওয়াটের এইচএসডিভিত্তিক দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে গতকাল। কেন্দ্র দুটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য হবে ১৯ দশমিক ৯৯৩০ টাকা। ডিজেলচালিত সব কেন্দ্রই হবে পাঁচ বছর মেয়াদি।
অনুমোদন দেয়া বাকি ছয়টি কেন্দ্র হবে এইচএফওভিত্তিক ও ১৫ বছর মেয়াদি। এর মধ্যে বগুড়ায় কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস লিমিটেডের ১১৩ মেগাওয়াট, চাঁদপুরে দেশ এনার্জির ২০০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিডল্যান্ড পাওয়ারের ১৫০, খুলনার লবণচরায় ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাটের ১০৫ এবং সামিট করপোরেশন ও সামিট পাওয়ারের কনসোর্টিয়াম গাজীপুরের কড্ডায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন পেয়েছে। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুতের মূল্য হবে ৮ দশমিক ২৫৯৩ থেকে ৮ দশমিক ৩৩৭৯ টাকা।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্যাকেজ-১-এর আওতায় ৫০ হাজার টন গম আমদানির জন্য ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এজন্য সরকারের ব্যয় হবে ১০৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গম সরবরাহ করবে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যাস্টোন এফএফআই লিমিটেড। এছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল আমদানির অন্য একটি প্রস্তাবও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এজন্য সরকারের ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ৯ লাখ টাকা। এ চাল সরবরাহ করবে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ওলাম লিমিটেড।
বৈঠকে ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের জন্য ৩০ হাজার টন ফসফরিক অ্যাসিড আমদানিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
চিটাগং পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্টের আওতায় সরকারি অর্থায়নে ক্রয় করা চারটি কনটেইনার স্ক্যানার ও ১০টি রেডিয়েশন ডিটেকশন যন্ত্রপাতির পরিচালন ও সংরক্ষণ-সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ১১ কোটি ৪২ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের বিভিন্ন সেক্টরে খাল ও লেকের ওপর অ্যাপ্রোচ রোডসহ ব্রিজ নির্মাণকাজ (ক) প্যাকেজ: বিআরসি-৫, লট-০৫ ও (খ) প্যাকেজ: বিআরসি-৬, লট-১-এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে এদিন। দুটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ২০ কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
জামালপুর শহরে ‘নগর স্থাপত্যের পুনঃসাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের একটি প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১০৫ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিসিইএল-এনটিএল-এমএম যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) বাস্তবায়নাধীন ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো-সরকার-৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২৯৩টি ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক টপোলজি, সার্ভে ডিজাইন, ইনস্টলেশন, টেস্টিং ও কমিশনিং অব অ্যাক্টিভ ডিভাইস, অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন এবং পিওপি রেনোভেশন কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ১৮৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সামিট কমিউনিকেশন্স।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিসিসি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন একই প্রকল্পের আওতায় আরো ১ হাজার ৩০৭টি ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক টপোলজি, সার্ভে ডিজাইন, ইনস্টলেশন, টেস্টিং ও কমিশনিং অব অ্যাক্টিভ ডিভাইস, অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন ও পিওপি রেনোভেশন কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ১৮৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়ন করবে ফাইবার অ্যাট হোম।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘লক্ষ্মীপুর জেলার অন্তর্গত রামগতি ও কমলনগর উপজেলা ও তত্সংলগ্ন এলাকাকে মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রদত্ত কার্যাদেশের ভেরিয়েশনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ বাড়ায় ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ১০২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
বাপাউবো বাস্তবায়নাধীন ‘কক্সবাজার জেলার টেকনাফস্থ শাহপরীর দ্বীপে পোল্ডার নং-৬৮-এর সি-ডাইক অংশের বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষাকাজ বাস্তবায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী পাঁচটি প্যাকেজের মাধ্যমে সম্পাদনযোগ্য নির্মাণ ও পূর্তকাজগুলো সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের মাধ্যমে বাস্তবায়নের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে অন্তর্বর্তীকালীন ছয় মাসের জন্য মেইনটেন্যান্স সার্ভিসসহ বিআরটিএর ডাটাবেজের মাধ্যমে রিয়েল টাইম অনলাইন ওয়েব বেজড মডার্ন টোল কালেকশন সিস্টেম ক্রয়ের প্রস্তাবসহ মোট তিনটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।