মোঃ জাকারিয়া, ব্যুারো চীফ, গাজীপুর: জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদিও অনেক দূরে তবুও রাজনৈতিক আবহ সৃষ্টি হওয়ায় নির্বাচনী আমেজ তৈরী হয়ে গেছে। জেলার ৫টি আসনে অসংখ্য প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রার্থী হচ্ছেন প্রতিদিন। যত দিন যাচ্ছে প্রার্থীও বাড়ছে। তবে প্রার্থীর আসল সংখ্যাটা কত সেটা জানতে চূড়ান্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
গাজীপুর জেলায় মোট ৫টি সংসদীয় আসন রয়েছে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য তথ্যমতে আসন ভিত্তিক তথ্য নিম্নরুপ:
গাজীপুর-১ আসনটি কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর মহানগরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। এই আসনে বর্তমান সাংসদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এড. আ ক ম মোজাম্মেল হক। গত নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন বিএনপির তৎকালিন স্থায়ী কমিটির সদস্য (বর্তমানে বহি:স্কৃত) চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে তেমন কোন প্রার্থী মোজাম্মেল হকের সঙ্গে মনোনয়ন দৌঁড় দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। তবুও তালিকায় আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন শিকদার।
বিএনপিতে গুঞ্জন রয়েছে যে, তানভীর সিদ্দিকীকে দলে ফিরিয়ে এনে প্রার্থী করা হতে পারে। তবে আলোচনায় আছেন বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রিয় নেতা হুমায়ুন কবীর খান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ¦ সোহরাব উদ্দিন। এই আসনে নতুন মুখ হিসেবে গাজীপুর সিটি মেয়র এম এ মান্নানের ছেলে এড. মনজুরুল করিম রনির নাম শুনা যাচ্ছে।
গাজীপুর-২ আসনটি সদর ও টঙ্গী নিয়ে গঠিত। এই আসনে বর্তমান সাংসদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল। আপতত তার বিপরীতে তেমন কোন প্রার্থী দৃশ্যমান নেই আওয়ামীলীগে।
এই আসনে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের নাম সরব। এ ছাড়াও বিএনপি থেকে যারা প্রার্থী হবেন বলে গুঞ্জন আছে তাদের মধ্যে কেন্দ্রিয় নেতা সালাউদ্দিন সরকার অন্যতম।
গাজীপুর-৩ আসনটি শ্রীপুর উপজেলা ও গাজীপুর সদর উপজেলার আংশিক নিয়ে গঠিত। এই আসনে বর্তমান সাংসদ এড. রহমত আলী। স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি পুনরায় মনোনয়ন চাইবেন কি না সন্দেহ রয়েছে। রহমত আলী মনোনয়ন না চাইলে তার ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় মনোনয়ন চাইবেন বলে শুনা যাচ্ছে। এই আসনে আওয়ামীলীগের আরেক প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। নৌকা প্রতীক নিয়ে রহমত আলী ও সবুজের মধ্যে মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা রয়েছে।
এই আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে ছিলেন গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান। পরবর্তিতে তিনি মেয়র হওয়ায় এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম মাঠে রয়েছে। তাদের মধ্যে গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, সাবেক কেন্দ্রিয় নেতা পীরজাদা এস এম রুহুল আমিন, বিএনপি নেতা ডাঃ শফিকুল ইসলাম অন্যতম। নতুন ভাবে মাঠে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রিয় সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু।
গাজীপুর-৪ আসনটি কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে বর্তমান সাংসদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি। আপাতত নিজ দলে তার কোন প্রতিদ্বন্ধি দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি থেকে প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ’র ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান।
গাজীপুর-৫ আসনটি কালিগঞ্জ উপজেলা ও গাজীপুর সদর উপজেলার আংশিক নিয়ে গঠিত। এই আসনের বর্তমান সাংসদ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। নিজ দলে তার প্রতিদ্বন্ধি হিসেবে আছেন গাজীপুর জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক ডাকসু ভিপি আখতারুজ্জামান।
এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রার্থী। তিনি এই আসনের সাবেক এমপি। নিজ দলে তার তেমন কোন প্রতিদ্বন্ধি নেই। তবে নতুন মুখ আসতে পারে বলেও চাওড় রয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামীলীগ ও বিএনপির অনেক নতুন নতুন প্রার্থী প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজে অথবা ভক্তদের দিয়ে প্রার্থী হওয়ার পোষ্ট দিচ্ছেন। নিজেদের পরিচিতি জানান দেয়ার জন্য তারা ডিজিটাল ওয়ার্ক করে যাচ্ছেন। ফলে প্রতিদিনিই গাজীপুরের ৫টি আসনে প্রার্থী বাড়ছে।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনের খবর নেই কিন্তু প্রার্থীর অভাব নেই। এখন প্রার্থী যে কেউ হতে পারেন। নির্বাচন আসলে দেখা যাবে কে কে প্রার্থী।