গোপালগঞ্জের উত্তাল মধুমতিতে ভরা বর্ষায় ও নেই ইলিশ! দেশীয় মাছের চরম আকাল

Slider গ্রাম বাংলা

Photo-1-4

এম আরমান খান জয়, গোপালগঞ্জঃ

উত্তাল নদীতে নৌকা-জাল-জেলে সবই আছে, শুধু নেই ইলিশ। এ চিত্র মধুমতির। ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। দু’একটি পাওয়া গেলেও ইলিশের রুপালি ঝিলিকের মতো দামটা ও ঝলকানো।
এক সময়ের মৎস্য ভান্ডার বলে খ্যাত বৃহত্তর ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ এর মধুমতি নদীতে বর্ষাকালে পাওয়া যেত প্রচুর ইলিশ। এ নদী এখন মরা মধুমতি নদীতে পরিণত হয়েছে। এখানে ইলিশের ছড়াছড়ি আর নেই। সাথে দেশীয় প্রজাতির মাছের চলছে চরম আকাল। জেলায় বিলুপ্ত হতে চলেছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। দেশীয় মাছের বাজার দখল করেছে পাঙ্গাস ও তেঁলাপিয়া মাছ। এ ছাড়াও হাওর-বাওড়, খাল-বিল, জলাশয়, পুকুর ভরাট ও পানি দুষিত হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এসব মাছ। এ ছাড়াও খালে-বিলে বিভিন্ন ফাঁদ তৈরী করে ছোট মাছ শিকার করায় এখন বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে ট্যাংরা, শিং, পুঁটি, মলা-ঢেলা, চান্দা, খলিশা, পাবদা, কৈ, কাচকি, টাকি, বাতাসী, চাপিলা, চিংড়ি, শোল, মাগুর, বোয়াল, সরপুঁিট, গুতিয়া, বাইনসহ আরো অনেক দেশীয় মাছ। আজ বিলুুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এসব মাছের ভান্ডার। জেলার ৫টি উপজেলার লোকজনদের নির্ভর করতে হচ্ছে পুকুরের চাষ করা মাছের উপর। জনসংখ্যা চাপের কারনে অতিরিক্ত মাছ আহরন, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা, যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহারের জন্য মাছ উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। মিঠা পানির ৫৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৩২টি প্রজাতিই ছোট, যার ৫টি চরম বিপন্ন, ১৮টি বিপন্ন ও ৯টি সংকটাপন্ন বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন। এছাড়া নদীতে দেশীয় প্রজাতীর ছোট মাছ কমে যাওয়ায় মৎস্য বিশেষজ্ঞরা যেসব সমস্যার কথা বলছেন তার মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বেশী বেশী করে মাছ শিকার, জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকা, জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিত বাঁধ, নদীতে অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি। কালের পরিবর্তনে নানা দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার কারনে মাছে-ভাতে বাঙালীদের এখন নির্ভর করতে হচ্ছে তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, মিয়ানমারের রুই, সিলভার ও মিনার কার্প এর উপর। জমি ও জলাশয়ে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, যখন তখন মা মাছ ধরায় দেশীয় মাছ কমে যাওয়ার অন্যতম কারন। অন্য ক্ষেত্রে জলবায়ুর পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনেও দেশী মাছ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে বলে সচেতন মানুষের ধারনা। গোপালগঞ্জে টুংগীপাড়া উপজেলাধীন বাঘিয়ার বিলের মাছ শিকারী করম আলী শেখ বলেন, ২ থেকে ৩ বছর আগে বিলে যে পরিমান মাছ পেতাম তার তুলনায় এখন খুবই কম। আর সে পরিমান মাছ পাই না। যা পাই তাই দিয়ে কোন ভাবে পাঁচ জনের সংসার চলে। গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। এটাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য দখল হওয়া এবং পরিত্যাক্ত পুকুর, ডোবা ও খাল-বিল উদ্ধার ও খনন করে সেখানে মৎস্য চাষ করতে হবে। মাছ চাষ ও উৎপাদন বাড়িয়ে তা রপ্তানি করে বেশী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কোটালীপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, মাছ ধরার ব্যাপারে স্থানীয় জেলেদের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে তাদেরকে আর্থিক ভাবে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তারা বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে ডিম ওয়ালা মাছ না ধরে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ী ধীমান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রভাবশালী অনেকেই সাধারন মাছ চাষীদেরকে বেশি লাভের আশায় বিদেশী মাছ করাতে বাধ্য করছে। ফলে দেশী মাছের চাষ কমে যাচ্ছে। গোপালগঞ্জ মধুমতী নদী বিধৌত এলাকা। এক সময়ে মধুমতী নদী ছিল প্রবল খর¯্রােত। এখানে পাওয়া যেত প্রচুর পরিমান ইলিশ মাছ। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, সহ দুই বাংলার মানুষের কাছে মধুমতী নদীর ইলিশ ছিল খুব প্রিয় বস্তু। অন্যান্য জায়গার ইলিশের চেয়ে এ নদীর ইলিশের স্বাদই ছিল আলাদা। ইলিশ ও দেশীয় প্রজাতি মাছের স্বাধ ভুলতে বসেছে গোপালগঞ্জবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *