পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৪১টি প্রকল্প পরিদর্শনের পর মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে। বিভিন্ন সুপারিশসহ প্রতিবেদনগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানোও হয়। এর পর ১৯টি প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের জবাবে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে আইএমইডিকে জানানো হয়েছে। অন্য ২২টি প্রকল্পের ক্ষেত্রে গৃহীত ব্যবস্থা বিভাগকে জানানো হয়নি।
কেবল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ নয়, সরকারের ৩৪টি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থা প্রায়ই তাদের প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাতে আইএমইডিকে পাশ কাটিয়ে যায়। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারকি সম্পর্কে এমন চিত্রই উঠে এসেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সাম্প্রতিক এক বৈঠকে। কমিটির সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) বৈঠকে বলেন, শুধু জনবল বাড়ালেই যে আইএমইডির ক্ষমতা বেড়ে যাবে, এটি ভাবার কোনো অবকাশ নেই। বাস্তবায়ন শব্দটি আইএমইডি নামের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ। আইএমইডিকে কার্যকর করতে হলে অবশ্যই সংস্থাটিকে সুপারিশ বাস্তবায়নে এনফোর্সমেন্টের ক্ষমতা দিতে হবে বলে বৈঠকে তিনি মত প্রকাশ করেন।
একই বৈঠকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৪১ প্রকল্পের মধ্যে ২২টির বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে আইএমইডিকে প্রতিবেদন না দেয়ার বিষয়টিকে হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন। আইএমইডিকে শক্তিশালী করার বিষয়টি তিনি মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করবেন বলেও জানান।
এর আগে আইএমইডি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার প্রায় ৫৩০টি প্রকল্প পরিদর্শন করে। এ সময় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের প্রমাণও পায় সংস্থাটি। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইএমইডির বিভিন্ন সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে পাঠানো হয়। অধিকাংশ মন্ত্রণালয় আইএমইডির সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
জানা গেছে, আইএমইডি বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করে সুপারিশমালা দিলেও এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আইএমইডি পরিদর্শন প্রতিবেদনের সুপারিশ নিষ্পত্তির অনুরোধ জানায়। প্রয়োজনে আইএমইডির সচিব ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সচিবের কাছে আধা সরকারিপত্র (ডিও) পাঠায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব মফিজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে আইনি বাধ্যবাধকতা নেই কথাটি সত্য। তবে আইএমইডির সুপারিশ যাতে বাস্তবায়ন করা হয়, সেজন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। আইএমইডি অনেক পরিশ্রম করে সুপারিশগুলো প্রণয়ন করে। সুতরাং এগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দেশের উন্নয়ন মানসম্মত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্নয়ন প্রকল্প নজরদারির দায়িত্ব আইএমইডির হলেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটির নেই প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল ও যানবাহন। এমনকি কোনো প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পেলেও সুপারিশের বাইরে কিছুই করার থাকে না। সংস্থাটির যথেষ্ট কারিগরি সক্ষমতাও নেই। এ কারণে ফ্লাইওভার ও সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো মনিটরিং ও মূল্যায়ন করতে পারে না সংস্থাটি।
আইএমইডির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বড় অবকাঠামো প্রকল্পে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন। সরকারি প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইএমইডির সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দেয়া জরুরি।