রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিমা জামানের অপসারণের দাবিতে বিভাগের ১১ জন শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা বজর্ন করে অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিভাগের সভাপতির কক্ষের সামনের বারান্দায় অবস্থান নেন তারা।
তবে শিক্ষকদের কর্মসূচি শুরুর আগে বিভাগীয় সভাপতি নিজ দফতরে প্রবেশ করেন। ফলে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। তবে সভাপতি ব্যতিত বিভাগের ১২ জন নিয়মিত শিক্ষকের মধ্যে একমাত্র সভাপতির অনুসারী সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনকে বিভাগের দেখা যায় নি।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. আমিনুর রহমান, অধ্যাপক এসএম এক্রাম উল্যাহ, ড. এসএম রাজী, ড. কফিল উদ্দিন আহমেদ, ড. মো. রুহুল আমিন, সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাত তাসনীম, মো. তারেক নূর, সহকারী অধ্যাপক মোসা. কামরুন নাহার, ড. একেএম মাহমুদুল হক, ড. মো. সুলতান মাহমুদ, এসএম মোখলেসুর রহমান।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের অধ্যাপক এসএম এক্রাম উল্লাহ জানান, ‘বিভাগের সভাপতি নাসিমা জামানের প্রত্যক্ষ মদদে সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শ্রেণীকক্ষে যে ধারাবাহিক কটুক্তি করে আসছিলেন, তার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে আন্দোলন করায় তাদের বিরুদ্ধে সভাপতি ও ওই শিক্ষিকা উদ্ভট সব অভিযোগ তুলছেন। যাতে শিক্ষকদের সঙ্গে সঙ্গে বিভাগের ভাবমর্যাদাও ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। এতে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানে বিভাগের সভাপতিকে অপসারণের বিকল্প নেই। ’
জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিমা জামান বলেন, বিভাগের সান্ধ্যা কোর্সের শিক্ষার্থীদের নকলের মহা-উৎসব করার সুযোগ দিচ্ছেন ওই শিক্ষকরা। বিভাগের বিভিন্ন সময়ে অর্থ কেলেঙ্কারিতেও তারা যুক্ত। নিজেদের বিরুদ্ধে জমে থাকা বিভিন্ন অপকর্ম থেকে বাঁচতে একজোট হয়ে আমার সহকর্মীরা এখন অশিক্ষকসুলভ আচরণ করছেন। ’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও আমরা বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারছি না। অথচ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়ানোর জন্যে তারা এখন আন্দোলনে নেমেছেন। আমি তাদেরকে আহ্বান জানাবো- আপনারা শিক্ষকসুলভ আচরণ করুন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আস্থা রাখুন, তাদেরকে যে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। কর্মসূচি ছেড়ে ক্লাসে যোগ দেন, শিক্ষার্থীদের দিকে নজর দেন। ’
জানতে চাইলে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কাঁদা ছোড়াছুড়িতে বিষয়টি ঘোলাটে হয়ে গেছে। সংকট সমধানে আমরা চেষ্টা করছি। দ্রুত বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২ আগস্ট দায়িত্বে অবহেলা ও সভাপতির কক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি না টানানোসহ সাত অভিযোগে সভাপতির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে লিখিত অভিযোগপত্র দেয় ওই শিক্ষকরা। পরদিন সভাপতি ১১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ তুলে প্রশাসনকে পাল্টা অভিযোগপত্র দেয়।
এর আগে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে শ্রেণীকক্ষে ও বাইরে বিভাগের অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ‘মর্যাদাহানিকর’ ও ‘কটুক্তিমূলক’ কথাবার্তা বলার অভিযোগ তোলে বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। বিষয়টি সমাধানে ১১ জন শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট বিভাগের একাডেমিক কমিটির তলবি সভা আহ্বান করেন সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিমা জামান।
কিন্তু সভা শুরুর অল্প কিছু সময় পূর্বে তিনি ওই সভা স্থগিত করেন। স্থগিতের বিষয়ে সভাপতি শিক্ষকদের জানিয়ে দেন- ‘উপ-উপাচার্যের মৌখিক আদেশে সভা স্থগিত করেছি। ’ তবে উপ-উপাচার্য সভা স্থগিতের আদেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরে ৩১ জুলাই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীন বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে একাডেমিক ও যৌন হয়রানির অভিযোগ করে।