মিয়ানমারের মুসলিমদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধরা তাদের ওপর নতুন করে হামলা শুরু করেছে। এতে সেখানে নতুন করে ধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম যুবকদের ওপর মুখোশধারী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে হামলা চালাচ্ছে। তারা ভেঙে দিচ্ছে ধর্মীয় উপাসনালয়। এর প্রতিবাদ হচ্ছে মিয়ানমারের বিভিন্ন বড় বড় শহরে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, এমনিতেই সহিংস দাঙ্গার শিকার মুসলিম সংখ্যালঘুরা। অনেক স্থানে তাদের উপাসনালয় ভেঙেচুরে দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে অং সান সুচির অনভিজ্ঞ সরকার। বৃহস্পতিবার ভোরে মুসলিম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সাক্য নউই সিন এলাকায় লাঠি ও তরবারি নিয়ে প্রবেশ করে সশস্ত্র প্রায় ৩০ ব্যক্তি। এ স্থানটি মান্দালয়ে। তারা সেখানে প্রবেশ করেই হামলা চালায়। স্থানীয় প্রশাসক বলছেন, ওই সংঘর্ষে দু’জন মুসলিম যুবক আহত হয়েছেন। তবে এটা কোনো জাতিগত সংঘর্ষের ঘটনা নয় বলে দাবি করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা মেহর মুয়াং হটাই বলেছেন, যুবকদের মধ্যে শুধু সংঘর্ষ হয়েছে। তবে মান্দালয়ের অধিবাসীরা বলেছেন, এই ঘটনাটি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের মতোই ছিল। ২০১৪ সালে একই এলাকায় এমন দাঙ্গা হয়েছে। ২০১১ সালের শুরুতে সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে ফেরা শুরু হওয়ার পর মান্দালয় ও অন্যান্য বড় শহরে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ দেখা দিয়েছে। ২০১২ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ২০০ মানুষ নিহত ও হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মিয়ানমারে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ২০টি গ্রুপ একত্রিত হয়ে নেত্রী অং সান সুচিকে একটি চিঠি লিখেছে। তাতে মুসলিমদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সরকারকে আরো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারে শতকরা ৪.৩ ভাগ হলো মুসলিম। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, উগ্র জাতীয়বাদীরা ধর্মীয় ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য দিচ্ছে, ভীতি প্রদর্শন করছে, মুসলিমদের ওপর সহিংসতাকে অনুমোদন দিচ্ছে। এটাকে যেন সরকার প্রশংসা না করে বা মেনে না নেয়। রাখাই রাজ্য ছেড়ে মুসলিম বিরোধিতা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে চরম উদ্বেগজনক হারে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর তীব্রভাবে নিষ্পেষণ চালানো হচ্ছে। তাদেরকে একপেশে করে রাখা হচ্ছে। এমন ঘটনা ইয়াঙ্গুনের মতো বড় বড় শহরেও হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারি অনুমোদন ছাড়া যেসব ভবনে মুসলিমরা নামাজ আদায় করতেন তা বন্ধ করে দিতে উগ্র জাতীয়বাদীদের চাপের কাছে মাথা নত করেছে স্থানীয় কর্মকর্তারা। মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে মে মাসে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দুটি মাদ্রাসা। স্থানীয় মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, ইয়াঙ্গুনের উপকণ্ঠে ওয়াতকানে একটি মসজিদ ও আরেকটি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে কিয়াউকপাডুং-এ গত মাসে কর্তৃপক্ষ একটি ভবন গুঁড়িয়ে দেয়। তাদের সন্দেহ ছিল এটা একটি মসজিদ। কিন্তু তাদের সেই ধারণা ছিল ভুল। বৌদ্ধদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা শোয়েডাগন প্যাগোডার কাছেই দুটি তথাকথিত ‘বয়কট ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠা করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একটি দল ও তাদের সমর্থকরা। মান্দালয় প্যাগোডায়ও একই রকম আরেকটি ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। সেখানে ব্যানারে লেখা হয়েছে, বৌদ্ধদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে অং সান সুচির সরকার। তবে এমন সরকার বিরোধী অবস্থানকে অযাচিত বলে আখ্যায়িত করেছে সরকার সমর্থিত সংঘ মহা নায়েকে কমিটি। তারা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের এ বিক্ষোভ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্দেহজনক বিদ্রোহের ঘটনায় রাখাইনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে।