এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ কণ্ঠশিল্পী হায়দার হোসেন গানের লাইন মনে পড়ে গেলো, ‘যার চলে যায়, সেই বোঝে হায়, বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা।’ সত্যি ‘বিদায়’ শব্দটা আসলেই কতটা গভীর তা হয়তো শুধু যারা হারায়, তারাই বোঝে।
একদিন আগেও যেই ছেলেটা সাভারে ক্যাম্পাসের সামনে চায়ের আড্ডায় সবাইকে মাতিয়ে রাখতো, আজ সে নিথর হয়ে শুয়ে রয়েছে। বন্ধুরা তো কেঁদে কেঁদে ব্যাকুল হয়েছে সেই তখন, যখন সে খরস্রোতা নদীতে নামার পর নিখোঁজ হয়। কিছুক্ষণ পর সে বন্ধুদের মাঝে ফেরে, কিন্তু লাশ হয়ে।
রমজান ঈদের পর বাবা-মায়ের আদুরে আবির আবার বাসায় এসেছে, তবে এবার আগের মতো উচ্ছ্বলতা নিয়ে নয়; একরাশ নীরবতা নিয়ে, লাশ হয়ে।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার সাভারে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী নদীতে গোসল করতে গিয়ে সে নিখোঁজ হয়। কিছুক্ষণ পর তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই সহপাঠীরা লাশ নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বেলা ১১ টায় লাশ আবিরের বাসায় এসে পৌঁছে।
আবিরের বাবা আজমত রানা ঠাকুরগাঁও শহরের একজন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ও কলামিষ্ট হিসেবে পরিচিত। তিনি ঠাকুরগাঁও পিডিবি রোড পাওয়ার গ্রিড হাউজে কর্মরত। ছেলের মৃত্যুর খবর কোন মতেই মনে নিতে পারছেন না আবিরের বাবা।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আবিরের মা-বাবা ছেলের নিথর দেহকে সামনে পেয়ে যেন আরও পাগল হয়ে ওঠেন। সেসময় এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আবিরের মৃত্যুর খবর শুনে পরিবার, বন্ধুমহল ও শুভাকাঙখীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
বাদ যোহর ঠাকুরগাঁও রোডের কাজীপাড়াস্থ গ্রামের বাড়িতে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে খানকায় পারিবারিক গোরস্তানে মরহুমের দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।
আবির মাহফুজ ২০১১ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ঢাকার ট্রাস্ট কলেজে ভর্তি হয়। ২০১৩ সালে ট্রাস্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিতে ভর্তি হয়। সে বিএসসি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল।
এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন