নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় স্টেডিয়ামের চারপাশটা দীঘি ও ভেতরটা দ্বীপে পরিণত হয়েছে। গতকাল দুপুরে সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এমনই দেখা যায়। মূল মাঠের ভেতর বাউন্ডারি ও গ্যালারি সংলগ্ন স্থানগুলোর চারপাশ তলিয়ে গেছে। পিচসহ মধ্যভাগ শুধু ভেসে আছে। দূর থেকে দেখলে মাঠটিকে মনে হবে চারদিকে পানি মধ্যে সবুজ দ্বীপ। অন্যদিকে বাইরের মাঠ দেখলে চোখ কপালে উঠবে। পুরো আউটডোর স্টেডিয়াম যেন একটি বিশাল দীঘি। চারদিকে থৈ থৈ পানি। গেল কয়েকদিন বৃষ্টি না হলেও স্টেডিয়ামের অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। প্লাবিত থাকায় গত সপ্তাহে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদল প্রস্তুতি ম্যাচের ভেন্যু ফতুল্লা স্টেডিয়াম পরিদর্শন করতে পারেনি। হেলিকপ্টারে চড়ে উপর থেকে প্লাবিত ভেন্যু পরিদর্শনের পর মিরপুর ও চট্টগ্রাম ভেন্যু দেখেছেন। অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশে আসার আগে আবারো ফতুল্লা ভেন্যু পরিদর্শন করবে প্রতিনিধি দলটি। তারা নেতিবাচক প্রতিবেদন দিলে ভেন্যুটির আন্তর্জাতিক মান নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। জানতে চাইলে বিসিবির মাঠ কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘বিসিবি কিন্তু ফতুল্লা নিয়ে ভাবছে। যদি আন্তর্জাতিক এই ভেন্যু নিয়ে নেতিবাচক কিছু আসে, সেটা আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক ব্যাপার হবে। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ হলে এই ভেন্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠবে হয়তো। সেক্ষেত্রে বোর্ড বলতে পারবে এই মাঠের ভবিষ্যৎ কী হবে?
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নেমে পড়ার আগে ফতুল্লায় একটি দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে সফরকারীরা। কিন্তু এক মাস ধরে জলাবদ্ধতায় ভেন্যুটির যে দশা, সেখানে ম্যাচ আয়োজন এখন দিবাস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্দিহান খোদ বিসিবিও। সেজন্য এখনই বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে বোর্ড। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিএনডি বাঁধের মধ্যে পড়েছে পঁচিশ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফতুল্লার এই জাতীয় স্টেডিয়ামটি। গ্রীষ্মের শেষ থেকে হওয়া বৃষ্ট্পিাতে ডিএনডি এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোমর, বুক আবার কোথাও হাঁটু পানি। এসব পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে খুব ধীরে ধীরে। মাঠের চারপাশের বসতি এলাকাগুলো নদীতে রূপ নিয়েছে। সেসব এলাকার জমে থাকা পানি প্রবাহিত হয়ে স্টেডিয়াম এলাকা তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে স্টেডিয়ামের পানি নিষ্কাশনে নির্মিত নালা দিয়েই পানি ভেতরে প্রবেশ করছে। মূল স্টেডিয়ামের পাঁচটি প্রবেশ পথের মধ্যে চারটি ফটকই পানিতে তলিয়ে আছে বেশ অনেক দিন থেকেই।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের বিকল্প ভেন্যু হিসেবে বিসিবির ভাবনায় প্রথমেই আসছে বিকেএসপির নাম। কিন্তু মিডিয়া কাভারেজ, দর্শক ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত প্রথম টেস্টের ভেন্যু মিরপুরেই আয়োজন করা হতে পারে প্রস্তুতি ম্যাচটি। এমন আভাস দিয়েছেন বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভূঁইয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফতুল্লার এখন যে পরিস্থিতি, তাতে ম্যাচ আয়োজন খুব কঠিন হয়ে যাবে। ১৮ তারিখ পর্যন্ত এখনো অনেক সময় আছে। তবে এটা খুব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। বিকল্প হিসেবে বিকেএসপি আসতে পারে। বোর্ড যদি মনে করে মিরপুরে প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে দেবে, দিতে পারে। এখানে অনেক পিচ আছে। মাঠ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে ফতুল্লা নিয়ে। বিকেএসপিতে হয়তো সব ধরনের ফ্যাসিলিটিজ দিতে পারবো না।’
সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে দর্শক প্রবেশ অবাধ হবে না। ড্রেসিংরুম, মিডিয়া বক্স বিশ্বমানের নয়। সেখানে প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন করলে দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে না বলে মনে করছেন হানিফ ভূঁইয়া। ‘বিকেএসপিতে আমাদের ভালো মাঠ আছে। কিন্তু মিডিয়া সাপোর্ট, দর্শকের চাহিদা-সেটাও দেখতে হবে। প্রস্তুতি ম্যাচ দেশের মানুষ দেখতে চাইবে। বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়, এইচপির খেলোয়াড়দের জন্য এই ম্যাচ বড় সুযোগ। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মানের দলের জন্য আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। তারা তো আমাদের মেহমান, তাদের কিভাবে ট্রিট করলাম সেটাও দেখার ব্যাপার আছে।’
১৭ই আগস্ট দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে ঢাকায় পা রাখার কথা অস্ট্রেলিয়া দলের। ২৭শে আগস্ট প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে ৪ঠা সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ খেলার আগে ২ দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচের সিডিউল রয়েছে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে। কিন্তু বর্তমান স্টেডিয়ামের এ পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি ম্যাচে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, মাঠের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া প্রস্তুতি ম্যাচের আগেই পানি মাঠ থেকে বের করে খেলার উপযোগী করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত এ পর্যন্ত ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে ২টি টেস্ট, ১০টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ও ৪টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘদিন এ মাঠে আন্তর্জাতিক খেলা নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটের কিছু খেলা হয় মাঝে মধ্যে। তবে পয়ঃনিস্কাষণ ব্যবস্থা ভাল না হলে এ মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন সম্ভব হবে না। খেলা না হওয়াতে প্রেস বক্স, ড্রেসিংরুমের অবস্থাও বেহাল। গ্যালারির অবস্থাও মান হারিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এটা আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে ইতিহাসের পাতায় উঠে যেতে পারে।