‘ওই ইলিশ, ইলিশ!’—এভাবে গলা চড়িয়ে হাঁকছিলেন মো. মাসুদ। রাজকীয় মাছের বিক্রেতা বলেই হয়তো গলায় অন্য রকম জোশ। ইলিশের চকচকে রুপালি ঝিলিক যেন এই ২৫ বছরের যুবকের চোখ ঠিকরে বেরোচ্ছে। ইলিশের দামেও যে আছে ঠমক। বেশি দাম বলে মুনাফার পাল্লাটাও ভারী।
প্রতিদিন রোদেলা সকালে রাজধানীর মিরপুরের অলিগলিতে মাসুদের হাঁক শোনা যায়। বাসাবাড়ি থেকে উঁকি দিলে দেখা যায়, মাথায় অ্যালুমিনিয়ামের বড় একটি হাঁড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
মাসুদের হাঁক শুনে অনেক পথচারী ও আশপাশের বাড়ির মানুষ আগ্রহী হন। তখন ডাক পড়ে মাসুদ মিয়ার। কিন্তু দাম শুনে বেশির ভাগই পিছু হটেন। কেউ কেউ আবার মাসুদ মিয়াকে বলেন, ‘কত নেবে, বলো?’
সাতটি ইলিশ একটি পাত্রে তুলে মাসুদ বলেন, ‘সাতটা একলগে লইলে ২৬০০ টাকা।’
কারণ মাসুদের মাছের হাঁড়ির ভেতর ইলিশগুলোর ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম।
গতকাল শনিবার সকালে মিরপুর ১০ নম্বরে এ দৃশ্য দেখা গেল।
এমন দাম চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, ‘আড়তে ইলিশ কম, দাম বেশি। বড় মাছের দাম আরও বেশি। ছোট ইলিশের কাস্টমার (ক্রেতা) আছে। বড় ইলিশ দাম শুইন্না কিনতে চায় না।’
ইলিশগুলো কোন আড়তের—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীর আড়ত থাইক্কা আনছি। হালি হিসেবে কিনছি।’
মাসুদের কথার সূত্র ধরে যাত্রাবাড়ীর খান মার্কেটে বেশ কয়েকটি মাছের আড়তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এগুলোর মধ্যে খান অ্যাসোসিয়েট কোম্পানি নামের একটি আড়তে কেবল ইলিশ মাছই বিক্রি করা হয়ে থাকে। আড়তের মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে ইলিশের দাম কম ছিল। এখন দাম বেড়েছে। ইলিশ কম আসছে।
এর কারণ কী? এ প্রশ্নের জবাবে বিল্লাল হোসেন বলেন, ইলিশ ভরা অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমার সময় ধরা পড়ে বেশি। মাঝামাঝি সময় কম পাওয়া যায়। কয়েক দিন আগে ইলিশ আসছিল বেশি। এখন মাঝামাঝি সময়। তাই ইলিশ উঠছে না। এ জন্য ইলিশের দাম বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এক কেজি ওজনের ইলিশের হালি এখন পাঁচ হাজার টাকা। তিন দিন আগে এর দাম ছিল চার হাজার টাকা।
সেই হিসাবে পাইকারি বাজারে একটি বড় ইলিশের দাম বেড়েছে ২৫০ টাকা।
ইলিশের আকার ছোট হলে দামও কমে যায়। ৫০০ গ্রাম ওজনের এক হালি ইলিশ আজ আড়তগুলোতে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এর কম ওজনের ৪টি ইলিশের দাম পড়ছে ১ হাজার টাকা।
তবে খুচরা বাজারে ইলিশের দাম আরও বেশি। রাজধানীর পশ্চিম কাজীপাড়ার হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি মাছের দোকানে ১ কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বাজারে থলিতে রাখতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হবে ৯০০ টাকা। আর ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে। যার দাম পড়বে ৬০০ টাকা।
ঢাকার সুপারশপগুলোতে ইলিশের দাম আরেকটু বেশি। ডেইলি শপে ৫০০ গ্রামের কিছু বেশি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪২৫ টাকায়। সুপারশপ স্বপ্নে ৬০০ গ্রামের কিছু বেশি ওজনের একটি ইলিশ কেনা যায় ৬২৫ টাকায়।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ইলিশ ধরা পড়ে বেশি। তবে জুলাই মাসের এই সময়ে যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ার কথা তা ধরা পড়ছে না। এমন তথ্য জানান মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শেখ মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ গভীর পানি থেকে ওপরে উঠে এলে ধরা পড়ে বেশি। এই উঠে আসার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নদীর গতি, পানির তাপমাত্রা, পানির গুণাগুণসহ আরও বেশ কিছু বিষয়। তাই কখন যে ইলিশ আসবে, বলা মুশকিল। কিন্তু অমাবস্যা ও পূর্ণিমার মধ্যবর্তী সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় ইলিশ কম ধরা পড়ে। তবে কিছু দিনের মধ্যে ইলিশ বেশি পরিমাণে ধরা পড়বে বলে আশা করেন তিনি।