নানা অপরাধে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার হয়। কিন্তু জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে ফের একই কাজে জড়ায় অবৈধ বিদেশিরা। তাদের নিয়ে অনেকটাই বিপাকে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কতজন বিদেশি অবৈধভাবে এদেশে অবস্থান করছেন তারও সঠিক হিসাব নেই তাদের কাছে। পুলিশের দাবি, এই অবৈধ বিদেশিদের যথাযথভাবে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আইনি জটিলতায় পড়তে হচ্ছে তাদের। যে কারণে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায় না। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বোর্ড গঠনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনেই অবৈধ বিদেশিদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব।
সূত্র জানায়, নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৬টি দেশের অন্তত ৭০০ নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। খসড়া তালিকা থাকলেও যথাযথ নজরদারি নেই। অবৈধ বিদেশিরা কে কোথায় কী ধরনের কাজ করছে, সরকারকে বিপদে ফেলতে ষড়যন্ত্র ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিনা, সে তথ্যও নেই কোনো সংস্থার কাছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, যখনই ভিসার মেয়াদ শেষ হয় তখন আফ্রিকার কিছু মানুষ তাদের পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলে। অবৈধ হওয়ার পর অসাধু মানুষের প্রশ্রয়ে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে গ্রেফতারের পরও তাদের সঠিক তথ্য না পাওয়ায় ফেরত পাঠাতে আইনি জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। এজন্য দ্রুত অবৈধ বিদেশিদের একটি পরিসংখ্যান তৈরি করে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে একটি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হবে। যে বোর্ডের মাধ্যমে অপরাধে জড়ানো বিদেশিদের নিজ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের ভাষ্য, অপরাধে জড়ানো অবৈধ বিদেশিদের ফেরত পাঠাতে আলাদা আইন কিংবা বোর্ড গঠনের প্রয়োজন নেই। এখন পর্যন্ত যে আইন আছে তাতে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গেই বাইরের যে কোনো নাগরিককে গ্রেফতার করে ফেরত পাঠানো যায়। পাসপোর্ট না থাকার কারণে বিদেশিদের সঠিক তথ্য না পাওয়ার বিষয়ে পুলিশের যে বক্তব্য, তার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ ভিসা নিয়ে যখন কেউ এদেশে আসে, তখনই তার একটি ডাটা বিমানবন্দরে সংরক্ষণ করা হয়।
কারা সূত্র জানায়, মাদকের চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কারাগারে বন্দী আছেন ৯৮ জন বিদেশি। এদের মধ্যে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত দুই বছর জেল খাটছেন ৮০ জন। সংশ্লিষ্ট দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ফেরত না নেওয়ায় এসব বন্দীকে মুক্তি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন অপরাধের জন্য কতজন আটক হওয়ার পর জামিনে রয়েছেন তার হিসাব কারা কর্তৃপক্ষের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, আদালত থেকে যেসব বিদেশি জামিন পান, তাদের আমরা আইনজীবী কিংবা দূতাবাসের যে কোনো কর্মকর্তার জিম্মায় ছেড়ে দেই। এরপরের কোনো কিছু নিয়ে আমাদের তদারকি থাকে না। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্যসূত্র থেকে জানা গেছে, দেশে বৈধ ও অবৈধ অন্য দেশের নাগরিকের সংখ্যা দুই লাখের মতো। এর মধ্যে ক্যামেরুন, ঘানা, কঙ্গো, নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, সেনেগাল, সিয়েরালিওন, ইথিওপিয়া, আলজেরিয়া, লাইবেরিয়াসহ অফ্রিকা মহাদেশের ১৭ হাজার নাগরিক অবস্থান করছেন। এরাই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি প্রতারণা, অস্ত্র, স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালান, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, বিভিন্ন দেশের জাল নোট তৈরি, ডলার জালিয়াতি, এমনকি জঙ্গি তৎপরতায়ও জড়িয়ে পড়ছেন। গোয়েন্দারা জানান, বিদেশিদের মধ্যে বেশিরভাগ পর্যটন ভিসায় বাংলাদেশে এসে কখনো নিজের পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলে, আবার কখনো ভিসার মেয়াদ থাকা অবস্থাতেই নানা অপতৎপরতা চালায়। মূলত গুলশান, বনানী, উত্তরার মতো রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোকে বিদেশিরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। এ ছাড়া বিনিয়োগকারী পরিচয়ে অভিজাত হোটেলে উঠে বিদেশে লোক পাঠানো, বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার আশ্বাস ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়েও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তারা প্রতারণা করছেন। অভিজাত এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার দায়ে এর আগে বেশকিছু বিদেশিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র্যাব। অপরাধ বিশেষজ্ঞ পুলিশের সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেগুলো বৈধ পথে এসে অবৈধ হয়ে অপরাধ কাজে জড়ান তাদের তথ্য অবশ্যই ইমিগ্রেশনে আছে। সেখানকার এন্ট্রি পয়েন্ট ধরে তথ্য নিয়ে তাকে তার দেশে পাঠানো সম্ভব। এক্ষেত্রে যথাযথ আইন রয়েছে।