ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও সফল অভিনেত্রী আনোয়ারা ভালো নেই। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী এখন চরম দুঃসময়ের মুখোমুখি। প্রচণ্ড অর্থ সংকটে ভুগছেন তিনি। অর্থের অভাবে তার অসুস্থ স্বামী এখন মৃত্যুর মুখে। চলচ্চিত্র সংগঠনগুলো তার পাশে নেই। প্রযোজকদের কাছে পাওনা টাকা চেয়েও পাচ্ছেন না। ধার নেওয়া অর্থও কেউ ফেরত দিচ্ছে না। উপায়ান্তর না দেখে মানবেতর জীবনযাপনে পড়া এই অসহায় অভিনেত্রী এখন প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
১৩ জুলাই আনোয়ারার স্বামী মহিতুল ইসলাম স্ট্রোক করেন। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। আনোয়ারা বলেন, ‘আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এই মুহূর্তে আমার কাছে এত টাকা নেই। ’ আগারগাঁওয়ের একটি হাসপাতালে ডা. দীন মোহাম্মদের তত্ত্বাবধানে তার স্বামীর চিকিৎসা চলছে। আনোয়ারা জানান, অভিনেতা ডি এ তায়েব ও নির্মাতা জি এম সৈকতের সংগঠন শিল্পী ঐক্যজোট তার পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সংগঠনের আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। তাই পুরোপুরি তাদের কাছে চাইতে পারি না। আনোয়ারা বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই শিল্পীদের পাশে থাকেন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ, ‘আমার স্বামীকে বাঁচান, আমাকে এই দুঃসহ অবস্থা থেকে উদ্ধার করুন। ’ আনোয়ারা সর্বশেষ বছর দুয়েক আগে জাহাঙ্গীর আলম সুমনের নির্দেশনায় ‘সোনা বন্ধু’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। নায়িকা হিসেবে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ১৯৬৭ সালে উর্দু ছবি সৈয়দ আউয়াল ও শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘বালা’তে। অভিনেত্রী হিসেবে আনোয়ারার টার্নিং পয়েন্ট একই বছর মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। ওই ছবিতে আলেয়া চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে সর্বস্তরের দর্শকের প্রশংসা কুড়ান তিনি। আনোয়ারা নৃত্যশিল্পী থেকে চরিত্রাভিনেত্রী হয়েছেন। ১৪-১৫ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। আনোয়ারার বাবা জামাল উদ্দিন, মা ফরিদুন্নেসা। বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। স্বামী মহিতুল ইসলাম। এক মেয়ে মুক্তি আর নাতনি কারিমা ইসলাম দরদী। এ অভিনেত্রীর পূর্ব নাম ছিল আনোয়ারা জামাল। আনোয়ারা বর্তমানে বনশ্রীতে থাকেন। দেশীয় চলচ্চিত্রের দুর্দিন শুরু হওয়ার পর থেকেই আনোয়ারার মতো প্রখ্যাত অভিনেত্রীরা বেকার হয়ে পড়তে থাকেন। সিনেমা হল কমছে, একই সঙ্গে সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে হাতে গোনা। যা হচ্ছে তাতে আবার মানের অভাব। এসব কারণে আনোয়ারার মতো কিংবদন্তি শিল্পীরা আজ কাজের অভাবে মানবেতর জীবনের মুখোমুখি। পরিবার নিয়ে দুঃসহ দিন কাটাচ্ছেন তারা। চলচ্চিত্রবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারেন চলচ্চিত্র শিল্প ও শিল্পীদের এই দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করতে। এমনটি জানান চলচ্চিত্রবোদ্ধারা।