স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কারওয়ান বাজার ও রাজধানীর বড় পাইকারি বাজারগুলোয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। রাজধানীর প্রবেশমুখ পর্যন্ত এলেও জলাবদ্ধতার কারণে পাইকারি বাজারে ঢুকতে পারছে না এসব ট্রাক।
একই অবস্থা দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেরও। স্বাভাবিক সময়ে বাজারটিতে শুধু পেঁয়াজবাহী ট্রাকই প্রবেশ করে প্রতিদিন ৩০-৩৫টি। টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজবাহী কোনো ট্রাকই ঢুকছে না বাজারটিতে। অতি বৃষ্টিতে কমে গেছে বগুড়া থেকে সবজি পরিবহনও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়ছে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা। কৃষিপণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরাও। পরিবহনস্বল্পতার কারণে পণ্য কিনে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এর প্রভাবে মজুদ থাকা নিত্যপণ্য বিশেষ করে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সবজির দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।
কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি এটিএম ফারুক বলেন, প্রতিদিন এ বাজারে আড়াইশর বেশি ট্রাক সবজি নিয়ে প্রবেশ করে। মঙ্গলবার বৃষ্টি ও পানির কারণে বেশির ভাগ ট্রাকই বাজারে ঢুকতে পারেনি। বুধবারও (গতকাল) জলাবদ্ধতার কারণে দোকানে পণ্য তুলতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। এতে ভোক্তা ছাড়াও এ খাতে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
রাজধানীতে নিত্যপণ্যের আরেক বড় বাজার মৌলভীবাজারসহ পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় পণ্যবাহী এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ গাড়ি। নিত্যপণ্য বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, মসলা ও ডালজাতীয় পণ্য এ বাজার থেকে দেশের প্রায় সব স্থানে সরবরাহ হয়। কিন্তু টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে এসব বাজার থেকেও পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাসেম বণিক বার্তাকে বলেন, অতি বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় মৌলভীবাজারসহ প্রধান প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে বসতে পারছেন না। ট্রাকেও পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না।
এক সপ্তাহ ধরে খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা দিনের অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকায় পণ্যবাহী ট্রাক ও মিনি ট্রাক চলাচল কমে গেছে। বৃষ্টির কারণে পণ্য ক্রয়ের পরও খাতুনগঞ্জের গুদাম ও আড়ত থেকে তা সরিয়ে নিতে পারছেন না বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির কারণে এসব পণ্য ট্রাকেই রেখে দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিনের ট্রাক ভাড়া যুক্ত হয়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর থেকে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে ট্রাক প্রবেশ করতে না পারায় পরিবহনের সংকটও দেখা দিয়েছে। একই কারণে দিনাজপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাল নিয়ে ট্রাক প্রবেশ করতে না পারায় যানবাহন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে কয়েক দিন ধরে বহির্নোঙর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় খাতুনগঞ্জের অনেক আড়তে চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
পণ্য সরবরাহে বিঘ্নের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারেও। পেঁয়াজের মতো পণ্য বাইরে থেকে না আসায় এর দাম বাড়তে শুরু করেছে। খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন কাঁচাপণ্যের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃষ্টির আগে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজের দাম ছিল ১৭-১৮ টাকা। তিনদিনের ব্যবধানে একই মানের পেঁয়াজের দাম বেড়ে লেনদেন হচ্ছে ২০-২১ টাকা কেজি দরে। বৃষ্টিতে আমদানিকৃত চীনা আদা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বন্দর থেকে খালাস কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় দাম বেড়েছে এ পণ্যেরও। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় ৩৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি চীনা আদা লেনদেন হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স সৌমিক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে আমার গুদামে ৭০০-৮০০ বস্তা পেঁয়াজ ও আদা নষ্ট হয়েছে। কাঁচা পণ্য নষ্ট হলেও এ সময়ের মধ্যে কোনো পণ্য আড়তে আসেনি। এতে পেঁয়াজসহ প্রায় সব ধরনের কাঁচা মসলাপণ্যের দাম বেড়েছে।
রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সবজির বড় জোগান আসে বগুড়া থেকে। অতি বৃষ্টিতে সেখান থেকেও পণ্য সরবরাহ কম হচ্ছে। জেলার সবচেয়ে বড় সবজির মোকাম মহাস্থান হাটের ইজারাদার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে হাটে সবজির সরবরাহ কমেছে। হাটে সরবরাহ কম থাকায় বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেও কম। স্বাভাবিক সময়ে শুধু ঢাকায় দৈনিক প্রায় অর্ধশত ট্রাক সবজি পাঠানো হয় মহাস্থান হাট থেকে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে গতকাল ৩৫ ট্রাকের মতো সবজি পাঠানো গেছে।