২০১৬ সালে বাংলাদেশে এসেছে ৪৩ হাজার রোহিঙ্গা: ইউএনএইচসিআর

Slider জাতীয়

base_1500870419-000_IE2R3২০১৬ সালে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সশস্ত্র বাহিনীর নিপীড়ন শুরুর পর রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। বিগত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা আনুমানিক ৪৩ হাজার বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। বণিক বার্তার এক ই-মেইলের উত্তরে ইউএনএইচসিআর এ তথ্য জানিয়েছে।

২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের ক্যাম্পে হামলার পর রাখাইন প্রদেশে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দমন-পীড়ন শুরু করে। এরপর দলে দলে সেখান থেকে পালাতে থাকে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষ। পালিয়ে আসা মানুষের সিংহভাগ বাংলাদেশ সীমান্তে অশ্রয় গ্রহণ করে। মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক নাগরিকের এভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। নতুন করে আসা এসব মিয়ানমারের নাগরিকের তথ্যভাণ্ডার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে।

মিয়ানমারের বিশেষ দূতের ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এরই মধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। অনুপ্রবেশের ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও বিশেষ দূতকে অবহিত করা হয় সে সময়। মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক নাগরিকের অনুপ্রবেশ এবং আনুমানিক তিন লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার দীর্ঘ অবৈধ অবস্থানের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম, বিশেষত কক্সবাজার অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশেষ দূতকে অবহিত করা হয়।

এদিকে ইউএনএইচসিআরের বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০১৬তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ৪৩ হাজার। আর ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী শিবিরে রয়েছে ৩৩ হাজার ২০৭ জন রোহিঙ্গা। ফলে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে আসা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা হচ্ছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০৭ জন।

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে উল্লিখিত রোহিঙ্গা সংখ্যা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে সংস্থাটির দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র রিজিওনাল কমিউনিকেশন অফিসার ভিভিয়ান ট্যান বলেন, ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের যে সংখ্যাটি দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৩৩ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ইউএনএইচসিআরের কুতুপালং ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে রয়েছে। এছাড়া আনুমানিক দুই লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা এ দুই ক্যাম্পের বাইরে রয়েছে। অনিবন্ধিত এসব রোহিঙ্গার সংখ্যা গণনার জন্য বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে শুমারি শুরু করেছে, যার ফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এর বাইরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তর রাখাইন থেকে আনুমানিক ৪৩ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে আসা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০৭ জন। এর মধ্যে ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী শিবিরে রয়েছে ৩৩ হাজার ২০৭ জন রোহিঙ্গা। আর শরণার্থী অবস্থায় রয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার জন। এরা সবাই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে। এর বাইরে একজন বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এ সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ লাখের ভেতর বলে দাবি করছে।

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৩০০। ২০১৫ সালে এদের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ জন। বাংলাদেশের বাইরে থাইল্যান্ডে ১ লাখ ২ হাজার ৬০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। মালয়েশিয়ায় রয়েছে ৮৭ হাজার ও ভারতে ১৫ হাজার ৬০০ জন।

এদিকে শরণার্থীর অধিকার সুরক্ষা-বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনের (আইসিআরএমডব্লিউ) শুনানিতে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার বর্তমান সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজারের কিছু বেশি। আর মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর তথ্যমতে, বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজার ৯৪৮ জন। ২০১৫ সালের সর্বশেষ হিসাব থেকে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংস্থাটি।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা বর্তমানে কী সংখ্যায় ও কোথায় অবস্থান করছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করতে ২০১৫ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। মূলত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকদের শুমারির জন্য এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক শুমারি ২০১৫’ শীর্ষক প্রায় ২২ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০১৬ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত।

এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় কৌশলপত্র বা ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক পেপারে হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা হয়। এজন্য রোহিঙ্গা শুমারির প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নমুনা জরিপ করা হয়। জরিপ অনুযায়ী, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *