ঢাকা: নতুন অর্থবছরে (২০১৪-১৫) শেয়ারবাজারে তালিকা ভুক্ত হতে যাচ্ছে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো। পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার এ ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
শনিবার দুপরে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এমন ইঙ্গিত দেন।বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে সব চাকরিজীবীকে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসা, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, কর্মসংস্থানের আওতা বাড়ানো, বেসরকারি উদ্যোক্তা তৈরি, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে প্রস্তাব করেছে ইআরএফ।
এসময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজিবাজার থেকে আমরা বিনিয়োগ আহরণ করতে পারবো। কারণ বিগত তিন বছর থেকে এ বাজার পুঁজি সংগ্রহের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে।’তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে যায় না। এতদিন যায় নাই- এটা সত্য। আমার মনে হয় এবছর যাবে। এর জন্য আমরা সরকারে আসার পরে এ বিষয়টি নিয়ে বসেছি। আমি আশা করছি, এবারে প্রতিষ্ঠান যাবে এবং সেখান থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ আসতে পারে।’
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ডেসকো পাওয়ার, তিতাসসহ সরকারি মালিকানাধীন ১৬টি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। জানা গেছে, নতুন করে আসার অপেক্ষায় রয়েছে ২১টি। এসব প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনার লক্ষ্যে গত ৫ মে অর্থমন্ত্রণালয়ে সচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়।দেশের টাকায় দেশে বিনিয়োগ না হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে ইআরএফ নেতাদের এমন বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগ হয় না তার একটি কারণ হলো- বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ হচ্ছে না। যার ফলে কনফিডেন্সের অভাব হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি বুঝতে পারছি না, এটা কীভাবে সত্য! রাজনৈতিক অস্থিরতা সবখানেই কিছু না কিছু থাকে এবং সেখানেও বিনিয়োগ হয়েছে। আমাদের দেশেও এ রকম বিনিয়োগ হয়েছে। কনফিডেন্সের অভাবটা আসলে আমি বুঝতে পারছি না। কারণ একটি সময় এ সমস্যা থাকেও বিনিয়োগ হয়েছে বিনিয়োগ এসেছে। এখানে একটি সুন্দর মার্কেট রয়েছে। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। আবার চলে গেছে। এখন তারা আবার আসছে। এরকম একটি অবস্থায় কেন আমাদের বিনিয়েগকারীরা আস্থা পাচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়।’
এ নিয়ে করা যেতে পারে সে ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে পরামর্শও চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, ব্যক্তি আয়ের সীমা বাড়ানো, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের রাস্তার কাজ শেষ হওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা, কৃষি ক্ষেতে সরকারের অবস্থা এবং যেসব কৃষকের সন্তান বিদেশ যাচ্ছে তাদের দেশে ফেরার পর আবার কৃষিতে আকৃষ্ট করতে নতুন উদ্যোগের ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিবহন সেক্টর, করদাতার পরিমাণ দ্বিগুণ করা, বৃহৎ পরিসরে ৭টি বিশেষ শিল্পাঞ্চল বাস্তবায়ন, স্বাস্থ্যখাতসহ কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের বিষয়ে বক্তব্য দেন।
তবে বক্তব্যে পরিবহন সেক্টর, জ্বালানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ, করদাতার পরিমাণ বাড়ানোতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে না তবে রাজস্ব আইন অনুযায়ী জরিমানা দিয়ে এই টাকা বৈধ করার সুযোগ থাকবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তবে এ জরিমানার সর্বোচ্চ সীমা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। যার সর্বনিম্ন সীমা ১০ শতাংশ।এসময় উপস্থিত ছিলেন- সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাদল, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমানসহ কমিটির নেতারা এবং অর্থসচিব ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম, আইএমইডি সচিব সুরাইয়া বেগম।