নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বিদ্যুতের প্রধান উৎস ধরতে হবে

Slider জাতীয়

1ee93e46aa7941408a5f3a09fdcd00b0-597359e2d695eনবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিয়ে ও প্রকৃতি সংরক্ষণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আহ্বান জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। কমিটি মনে করে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস হতে হবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে। মূল চালিকাশক্তি হবে জাতীয় সংস্থা, দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও জন-উদ্যোগ।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সরকারের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (২০১৭-৪১)-এর বিপরীতে জাতীয় কমিটির প্রস্তাবের খসড়া রূপরেখায় এসব কথা বলা হয়। অনুষ্ঠানে জাতীয় কমিটির নেতারা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

প্রস্তাবিত রূপরেখা তুলে ধরেন জাতীয় কমিটির সদস্য ও গবেষক মাহবুব সুমন। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর আধিপত্য থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে মুক্ত করতে হবে। এতে দেশ ও জনগণের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি না করে সর্বোচ্চ চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো সম্ভব।

অনুষ্ঠানে জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার মূল বৈশিষ্ট্য হলো আমদানি ও রাশিয়া-চীন-ভারতের ঋণনির্ভরতা। যা পরিবেশবিধ্বংসী। সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস হলো কয়লা, এলএনজি ও পারমাণবিক। এর মূল চালিকাশক্তি হলো বিদেশি কোম্পানি অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক। এর বিপরীতে জাতীয় কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়, এই খাতের মূল বৈশিষ্ট্য হতে হবে দেশের সম্পদের ওপর নির্ভরতা। এবং রাশিয়া-চীন-ভারতের ঋণমুক্ত ও অনুকূল পরিবেশ।

প্রস্তাবে বলা হয়, ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার ১২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তার বিপরীতে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে টার্গেট থেকে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। প্রস্তাবে বলা হয়, বিদ্যুতের দামও এ ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী (২০১৫-এর দাম স্তর অনুযায়ী) ১২ টাকা ৭৯ পয়সার বিপরীতে ৫ টাকা ১০ পয়সায় আনা সম্ভব।

সভায় আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, আমরা কখনো দ্বিমত করিনি যে আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন নেই। কিন্তু এটা দেখিয়ে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল কয়লা প্রকল্পের প্রয়োজন নেই। সরকার যেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, এটা হলে দেশ ঋণের শৃঙ্খল ও আধিপত্যের মধ্যে পড়বে, পানি-মাটি-পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে জাতীয় কমিটি বিকল্প প্রস্তাব হাজির করছে।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শুধু এলএনজি আমদানির কথা বলা হচ্ছে। এর ফলে গ্যাসের দাম বাড়বে এবং বিদ্যুতের দামও বাড়বে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথাও সরকার বলে। বিদেশে এ নিয়ে ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে অথচ দেশে কোনো অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পরিবেশবিনাশী পথ বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভরতার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অথচ আমরা এসব চিন্তা করছি না। তাই দেশের সৌর-বায়ু-বর্জ্যের ব্যবহার বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তার বক্তব্যে বলেন, `প্রয়োজনে রাজনৈতিক ব্যবস্থা বদল করে গণমুখী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।’

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, `সরকারের কয়লানির্ভর বিদেশমুখী জ্বালানী নীতির বিপরীতে আমাদের নীতি হলো দেশমুখী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানীনির্ভর ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *