তিব্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজার হাজার টন সামরিক সরঞ্জামের সমাগম ঘটাচ্ছে চীনা সেনাবাহিনী। দোকলাম এলাকার সিকিম সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের পর থেকে তিব্বতের ওই অঞ্চলে সামরিক সরঞ্জাম নেয়া হচ্ছে বলে চীনা সেনাবাহিনীর মুখপত্র পিএলএ ডেইলি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উত্তর তিব্বতের দক্ষিণাঞ্চলের কুনলুন পর্বতের দিকে বিশাল সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে গেছে সেনাবাহিনীর ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের সদস্যরা। জিনজিয়াং এবং তিব্বতের তত্ত্বাবধান ও ভারত সীমান্তের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্টার্ন থিয়েটার। তবে সামরিক সরঞ্জামের সমাবেশ অনুশীলনের জন্য না কি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ঘটানো হচ্ছে সেবিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য দেয়নি পিএলএ ডেইলি পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মুখপত্র পিএলএ ডেইলি বলছে, গত মাসের শেষ দিক থেকে সীমান্তে সামরিক সরঞ্জামের সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে। পুরো সীমান্ত অঞ্চলে রেল ও সড়কপথে একযোগে এসব সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বরপূর্ণ পদক্ষেপের পরিমাণ বাড়িতে বলা হচ্ছে। তবে সামরিক সরঞ্জাম সমাবেশের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল সিসিটিভিতে তিব্বত অঞ্চলে পিপল লিবারেশন আর্মির ব্যাপক সামরিক অনুশীলনের সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। যে অঞ্চলে এই সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয় সেটি বিবাদপূর্ণ দোকলাম থেকে বেশি দূরে নয়; যেখানে চীন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে বলে হংকংয়ের প্রভাবশালী দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। তবে সামরিক সরঞ্জামের সমাবেশ অনুশীলনের জন্য না কি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ঘটানো হচ্ছে সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য দেয়নি পিএলএ ডেইলি। সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সাউথ এশিয়া স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ ওয়াং দেহুয়া বলেন, সৈন্যবহর ও অন্যান্য সরঞ্জামের উপস্থিতির মাধ্যমে পশ্চিমের সীমান্ত রক্ষায় চীন শক্তির প্রদর্শন করছে। প্রায় এক মাস ধরে সিক্কিমে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ভারত-চীনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ভারতের সঙ্গে ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে বলে বেইজিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়ে দিয়েছে চীন। এর আগে গত জুনের শুরুতে চীনের ওই সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। এরপর এই সড়ক নির্মাণ কাজে বাধা দেয়ার জন্য ভারতকে কড়া মাশুল গুণতে হবে বলে হুঁশিয়ারি এসেছে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও সরকারি মুখপাত্রদের কাছে থেকে। দুই দেশের সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। উত্তেজনা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, চীনের রাষ্ট্রীয় দৈনিক গ্লোবাল টাইমস অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। বেইজিংয়ের এই দৈনিক চলতি মাসে এক প্রতিবেদনে বলছে, ১৯৬২ সালে চীনা ভূখণ্ডে অতর্কিত ভারতীয় হামলার কারণে চীন-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এতে অন্তত ৭২২ চীনা সৈন্য ও ৪ হাজার ৩৮৩ ভারতীয় সৈন্যের প্রাণহানি ঘটে। সূত্র:- পিএলএ ডেইলি, টাইমস অব ইন্ডিয়া